বিএনপি ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘দুষ্ট লোকদের দুষ্টামি কিন্তু থেমে নেই। দলের ভেতরে কিংবা বাইরে হোক, অথবা দেশে ও দেশের বাইরে হোক, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। কারণ, এই দেশের অর্থসম্পদ, এই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে অনেকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির তিন জেলার নেতাদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ রূপরেখা নিয়ে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদীতে পৃথকভাবে আয়োজিত কর্মশালায় একই সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে অনেকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই দেশে যদি বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখা যায়, এ দেশে যদি দুর্বল জনসমর্থনহীন সরকার যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে না, এ রকম সরকারকে যদি ক্ষমতায় রাখা যায়, তাহলে এ দেশ থেকে অনেকে অনেক কিছু লুটেপুটে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এ দেশে যদি জনগণের সরকার থাকে, তখন এই দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিরাপদ থাকবে। যারা শকুনের দৃষ্টিতে এই দেশের অর্থসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন তারা দশবার চিন্তা করবে।
বিএনপি গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সময় সংবাদপত্র কত কী যে লিখেছে! সংবাদপত্র আমার বিরুদ্ধে, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে, দলের বহু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লিখেছে। কিন্তু আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন বলেছি, আমরা বাক্স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়নি; যেমন আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়েছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমরা যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম, তখন কি গুম-খুন হয়েছিল? আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদকে ধরে নিয়ে সীমান্তের ওপারে ফেলে রেখে আসা হয়েছিল। আমাদের সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ শত শত নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে। বিএনপির সময় এমন হয়েছে? হয়নি। কারণ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বাক্স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।
সরকারে থাকাকালে বিএনপির বিভিন্ন অর্জনের বিষয় উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও যোগ করেন, ‘অতীতে যেহেতু এই কাজগুলো আমরা করে এসেছি প্রমাণ আছে। খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের জন্য আমরা কাজ করেছি। আমরা নারীদের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছি, তার প্রমাণ আছে। দেশে শিল্প উৎপাদন বাড়াতে বিএনপির সময়ে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যেহেতু অতীতে আমরা যখন দায়িত্ব পেয়েছিলাম, ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি, করেছিও বহুলাংশে। এটিই প্রমাণ করে, ভবিষ্যতে আমরা সুযোগ পেলে ইনশা আল্লাহ আমরা ৩১ দফা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করব।
উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছেন, লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। অনেকে হত্যার শিকার হয়েছেন, জেল–জুলুমের শিকার হয়েছেন। গায়েবি মামলার শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছে। অত্যাচার–নির্যাতনের কারণে জঙ্গলে, ধানখেতে থাকতে হয়েছে। আপনারা সেই পরীক্ষা পার করে এসেছেন। পরীক্ষা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। সামনে পরীক্ষা আরও আছে। তিনি আরও বলেন, এটি এমন একটি যুদ্ধ, এটি জনগণের যুদ্ধ, এটি গণতন্ত্রের পক্ষের যুদ্ধ। এটি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি জয়ী থাকতে হয়, অনবরত আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
মানিকগঞ্জে সদর উপজেলার গিলন্ড এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খানমের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আফরোজা খানমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান মওদুদ আলমগীর। দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিনের (টুকু) সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল আলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান, সহসভাপতি খন্দকার আকবার হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রুখসানা খানম প্রমুখ।
মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রতন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অপর দিকে নরসিংদীতে মাধবদীর এক রিসোর্টে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। এতে বক্তব্য দেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, সহ ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হালিমা নেওয়াজ, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক শাম্মি আক্তার, গণশিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক আনিছুর রহমান তালুকদার প্রমুখ।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply