মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় বসছে ২০২ হাট।
সবচেয়ে বেশি হাট হবে কুমিল্লায়, ১০০টি।
বেশি যানজটের আশঙ্কা ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে।
ভোগান্তিতে পড়তে হবে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় কোরবানির পশুর ২০২টি হাট বসছে। এগুলোর মধ্যে ১০৩টি অস্থায়ী। এসব হাটের কারণে মহাসড়কের অন্তত ১১৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশ। এতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনে ঘরমুখী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। সবচেয়ে বেশি জটের আশঙ্কা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।
পশুর হাট-সংক্রান্ত পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আটটি জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ২০২টি পশুর হাট বসানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এসব হাটে পশুবোঝাই ট্রাকের যাতায়াতে মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে।
অবশ্য হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখব। পশুর হাটগুলো যাতে মহাসড়কের ওপর চলে না আসে, সে বিষয়ে ইজারাদারদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ১০০ হাট বসছে বৃহত্তর কুমিল্লায়। এগুলোর মধ্যে স্থায়ী ২৭টি এবং অস্থায়ী ৭৩টি। উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো মিরশ্বানি গরুর বাজার, বাগমারা বাজার, বিজরা বাজার, সংচাইল বাজার, নুড়ীতলা গরু বাজার, কংশনগর
বাজার, বাবুর্চি বাজার, বিপুলসার বাজার, কেরানী হাট, সেতুভাঙ্গা ও জমিদারহাট।
গাজীপুরে মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় বসছে ১৫টি পশুর হাট। এগুলোর মধ্যে স্থায়ী ৯টি এবং অস্থায়ী ৬টি। উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে, ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠ, উলাইল, কোনাব, মাহমুদাবাদ নামাপাড়া ও পিরোজপুর হাট।
বগুড়ায় মহাসড়কসংলগ্ন ১১টি স্থায়ী ও ৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এগুলোর মধ্যে নন্দীগ্রামের মনছুরা আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠ, কুন্দারহাট বাজার, টেংরামাগুর বাজার, রানীরহাট, মোকামতলা ডিগ্রি কলেজ মাঠ এবং ধানাইদহ পশুর হাট উল্লেখযোগ্য।
মাদারীপুরে মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় ১০টি পশুর হাট বসছে। এগুলোর ৭টি স্থায়ী, অস্থায়ী ৩টি। উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো চন্ডিবর্দি বাজার, বাগাট বাজার, সোনার বাংলা পশুরহাট এবং সাকুরা তেলের পাম্পের পাশের হাট।
সিলেট বিভাগের মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় পাঁচটি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি তিনটি অস্থায়ী হাট বসছে। উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো গোয়ালাবাজার, সৈয়দপুর বাজার ও মিরপুর বাজার।
খুলনায় মহাসড়কসংলগ্ন ২০টি পশুর হাটের সব কটিই স্থায়ী। এগুলোর মধ্যে চাড়াভিটা গরুর হাট, মাদ্রাসা বাজার হাট, লেবুতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের হাট, বারিনগর বাজার হাট ও ভাটার আমতলা হাট উল্লেখযোগ্য।
রংপুর বিভাগের মহাসড়কসংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী ৯টি হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ৫টি পশুর হাট বসানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাঁসিতলা বাজার, বালুয়া বাজার, ধাপের হাট বাজার, ভজনপুর বাজার ও তেঁতুলিয়া বাজার হাট।
ময়মনসিংহে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন হাট বসছে ১৮টি। এগুলোর মধ্যে স্থায়ী ১১টি এবং অস্থায়ী ৭টি। লেদুয়া বাজার স্কুল মাঠ গরুর হাট, তারেরঘাট বাজার, নান্দাইল চৌরাস্তা, ঝালুয়া বাজার, গাছতলা বাজার হাট, খিচা বাজার হাট ও তিনানী পাড়া হাট উল্লেখযোগ্য।
পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাসড়ককেন্দ্রিক ২০২টি পশুর হাটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাত্র ৬০টি।
মহাসড়কের ১১৮ স্থানে যানজটের আশঙ্কা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হাটের কারণে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ১১৮টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৫৭টি স্থানে তীব্র যানজট হবে।
সবচেয়ে বেশি যানজটের আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এই মহাসড়কে যানজটের জন্য ৩৯টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড ও আদমজী রোড; মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড; কুমিল্লার দাউদকান্দির বলদাখাল, গৌরীপুর ও কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট হবে ৩৬টি স্থানে। এগুলোর মধ্যে নরসিংদীর মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখেরচর, পাঁচদোনা মোড়া, ভোলানগর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব উল্লেখযোগ্য।
পশুর হাটের কারণে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৩৫টি স্থানে যানজটে মানুষের দুর্ভোগ হবে বলে পুলিশের আশঙ্কা। উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়, সম্ভার সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ঢাকার আশুলিয়ার নতুন ইপিজেড, পুরাতন ইপিজেড, বলিভদ্র, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর লিংক রোড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা এলাকার মহাসড়ক।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাসস্ট্যান্ড, সিড স্টোর, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডসহ পাঁচটি স্থানে তীব্র যানজট হতে পারে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এমন স্থান তিনটি। তবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, মহাসড়কে যানজট মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মোবাইল টহল বাড়ানো, অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা, অ্যাম্বুলেন্স রাখা, সরকারি ও বেসরকারি রেকার রাখা হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পশুর হাটের কারণে ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পশুর হাটগুলো ঈদযাত্রায় ভোগান্তির বড় কারণ হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করা হলেও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমে না। তিনি বলেন, এসব পশুর হাট সড়ক, মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় এখনো আছে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply