চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে অব্যাহত বাড়ছে ডালের দর। শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলেও তার প্রভাব নেই ডালের বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বিভিন্ন জাতের মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা। একই সময়ে সবচেয়ে বেশি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে মুগ ডালের দাম।ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে ডালের চাহিদা সবসময় বেশি। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করলে সাধারণত ডালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হয়ে আসে।কিন্তু এ বছর শীতকালীন সবজি ও ডালের দর দুটোই চড়া যাচ্ছে। এজন্য চাহিদার তুলনায় স্বল্প সরবরাহ ও অর্থনৈতিক সংকটকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশের ডালের বাজারের সিংহভাগই আমদানিনির্ভর হওয়ায় ও বাজারে পর্যাপ্ত বিকল্প পণ্য না থাকায় অব্যাহত দাম বড়ছে পণ্যটির।
দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মসুর ডাল (বড় দানা) কেজিপ্রতি গত সপ্তাহে ৯৭-৯৮ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা উঠেছে ১০২ টাকায়।
গত সপ্তাহের তুলনায় ৪-৬ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ভারতীয় মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৮-৩০ টাকায়। দেশী জাতের মসুর ডাল গত সপ্তাহের ১৩৩ টাকা থেকে বেড়ে এখন কেজিপ্রতি ১৩৭-১৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ান মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকায়।
বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মুগ ডালের দাম। মোটা মুগ ডাল গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা, যা বর্তমানে ২৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৮ টাকা।
একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিকন মুগ ডালের দাম ৩০-৩২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫২ টাকায়। বেড়েছে ছোলার দামও।
প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়।
অ্যাংকর ডাল (সাদা) সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬১-৬২ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে মসুর, মুগ, অ্যাংকরসহ ৮-১০ ধরনের ডাল বিক্রি হয়। দেশে বর্তমানে ডালের বার্ষিক চাহিদা ২৫-২৬ লাখ টন।
কিন্তু উৎপাদন হয় ১০-১১ লাখ টন। ফলে ডালের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি মেটাতে হয় ভারত, নেপাল, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে।
বর্তমানে দেশে চলমান ডলার সংকট, এলসি জটিলতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলায় পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।
ফলে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পণ্যটির দাম। খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে ডাল বিক্রেতা আজিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম সামান্য বাড়লেও মুগ ডালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
আমদানি করা ডালের চালান আসতে দেরি হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। তাই ডালের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে মুগ ডালের দাম সামনে আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
সাধারণত প্রতি বছর এ শীতকালে ডালের দাম স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এ বছরে ডাল ছাড়া অন্যান্য সবজি, মসলা বা ভোগ্যপণ্যের দামও আকাশছোঁয়া।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুগ ডালের ও ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিতেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। শীতকালে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়।
তাই এ সময়ে ক্রেতারা ডালের চেয়ে সবজি খেতেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু এ বছর সবজির দামও বাড়তি থাকায় ডালের বাজারে প্রভাব পড়েছে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply