উৎপাদন ঘাটতির কারণে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হিমশিম খেতে পারে রফতানিকারক দেশগুলো। এর পেছনে দায়ী করা হচ্ছে বৈরী আবহাওয়াকে। এ সময় সম্ভাব্য সংকট এড়াতে ক্রেতা দেশগুলো আমদানির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়াতে পারে। ফলে ভোগ্যপণ্যটির দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার আশঙ্কা রয়েছে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) চিনির ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য বেড়ে এক যুগের সর্বোচ্চে পৌঁছায়।
নভেম্বর পর্যন্ত দাম অব্যাহত বেড়ে পাউন্ডপ্রতি ২৮ সেন্টে উন্নীত হয়।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বের শীর্ষ চিনি রফতানিকারক দেশগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এতে ঝুঁকি বাড়ছে পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহে। স্থানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিনি রফতানি ও প্রণোদনায় বিধিনিষেধ এবং শুল্কারোপ করছে শীর্ষ দেশগুলো।
পণ্যটির বাণিজ্যিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আগামী বছর এটির বৈশ্বিক দাম অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে।থাইল্যান্ড এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদক ও রফতানিকারক। এল নিনোর প্রভাবে দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে।
পানির অভাবে আখ আবাদে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) থাইল্যান্ডে আখ মাড়াইয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৮ কোটি ৫০ লাখ টনে। চিনি উৎপাদন হতে পারে ৯৮ লাখ টন।
আগামী বছর দেশটির রফতানিও নিম্নমুখী থাকবে।
এঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস আরো জানায়, ২০২২-২৩ মৌসুমের আখ সংগ্রহ শেষ হয়েছে গত ৬ এপ্রিল।
এ মৌসুমে দেশটিতে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টন আখ মাড়াই হয়েছে। চিনি উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টন।
এদিকে থাইল্যান্ডের পাশাপাশি এল নিনোর প্রভাবে ধুঁকছে ভারতের আখ উৎপাদনও।
চলতি বছর দেশটিতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের মতো শীর্ষ আখ উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলোয় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত কম।
দেশটির আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, এ বছরের আগস্ট ছিল ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক মাস।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের সাম্প্রতিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী বছর দেশটিতে ইথানল উৎপাদন বাদ দিয়ে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টনে।
অন্যদিকে ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ ৮ শতাংশ কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএমএ)। গত ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এ মৌসুমে ভোগ্যপণ্যটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে প্রায় ৩ কোটি ৩৭ লাখ টনে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী। বর্তমানে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে কোটার ভিত্তিতে চিনি রফতানি করে।
চলতি মৌসুমে উৎপাদন কমে গেলে অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা মাথায় রেখে রফতানি বন্ধ রাখতে পারে ভারত।
এতে ভোগ্যপণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে চিনির দাম এক যুগের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। ভারত চিনি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে পণ্যটির দাম আরো বেড়ে যেতে পারে।
চলতি বছর দেশে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল চিনির ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরেরও। ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে সরবরাহ ব্যাহত হলে পণ্যটির দাম আরো বাড়বে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে নিম্ন ও মধ্য আয়ের আমদানিনির্ভর দেশগুলো।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply