ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে লোহিতসাগরে চলাচলকারী বিদেশি জাহাজে আক্রমণ করছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। এ কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলো সুয়েজ খাল এড়িয়ে আফ্রিকা হয়ে বিকল্প রুটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ যেমন বেড়ে গেছে, তেমনি সময়ও লাগছে বেশি। নতুন এই সংকটে আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প।ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লোহিতসাগরে চলমান অস্থিরতার কারণে ফ্রেইট চার্জ (পণ্য পরিবহন ভাড়া) ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এ ছাড়া আফ্রিকা হয়ে ঘুরপথে চলাচল করায় জাহাজ গন্তব্য বন্দরে পৌঁছাতে প্রায় দুই সপ্তাহ বেশি সময় লাগছে।
এতে বন্দরে ৪০ ফুট কনটেইনারের সংকট তৈরি হয়েছে। ক্রয়াদেশ হারাচ্ছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে ব্যবসা।
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোহিতসাগরে চলমান সংকটের প্রভাবে ফ্রেইট চার্জ আরও ২০-২৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে এই রুটে জাহাজ পরিচালনাকারী শিপিং কোম্পানিগুলো।
আগে ইউরোপে রপ্তানি পণ্যের চালান ৩০-৩১ দিনে পৌঁছালেও বর্তমানে তা পৌঁছাতে সময় লাগছে প্রায় ৪৫ দিন। এতে অন্তত ১৫ দিন সময় বেশি লাগছে।
পণ্য পরিবহনে সময় বেশি লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ।
তিনি বলেন, লোহিতসাগরে হামলার কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সময়মতো পণ্যের ডেলিভারি নিতে পারছেন না আমদানিকারকেরা। একইভাবে রপ্তানি পণ্যও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে না।
লোহিতসাগর এড়িয়ে শিপিং কোম্পানিগুলো আফ্রিকা এবং উত্তমাশা অন্তরীপের চারপাশ দিয়ে জাহাজ চালাচ্ছে।
ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত দুই সপ্তাহ সময় বেশি লাগছে।
জানা গেছে, হুতির আক্রমণের কারণে মার্স্ক, হ্যাপাগ-লয়েড, সিএমএ সিজিএম গ্রুপ ও এভারগ্রিনের মতো শিপিং ফার্ম এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) মতো বৃহৎ তেল কোম্পানিও লোহিতসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
এতে শিপিং খরচের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দামও বেড়ে গেছে। তেলের দাম ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলম্বো, সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, তানজুম পেলাপাস বন্দর পর্যন্ত কনটেইনারপ্রতি ফ্রেইট চার্জ ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলার।
জাহাজের ইনস্যুরেন্স, ফ্রেইট খরচ বাড়ার কারণে এই ভাড়া ৫০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক শিপিং কোম্পানি।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, লোহিতসাগরে হামলার কারণে কমপক্ষে ১১ দিন বেশি সময় জাহাজ চালিয়ে বিকল্প পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ফিরতি পথেও একই সময় লাগছে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply