আজ বীর প্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও ভূমিকার জন্য তিনি দেশের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন এক বীর নারী যোদ্ধা হিসেবে। ১৯৭৩ সালে সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪ এবং নাম উল্লেখ করা হয় মোছাম্মৎ তারামন বেগম হিসেবে।
১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তারামন বিবি। বাবা আবদুস সোহবান ও মা কুলসুম বিবির স্নেহে বেড়ে ওঠা এই কিশোরী মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে যুক্ত ছিলেন। তখন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন আবু তাহের।
মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামনকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন। প্রথমে রান্নার দায়িত্বে থাকলেও তার সাহস ও সক্ষমতা দেখে তাকে অস্ত্র চালনা শেখানো হয়। মাত্র ১৩–১৪ বছর বয়সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে বহু যুদ্ধে অংশ নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তাকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হলেও দীর্ঘ ২২ বছর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে তার সন্ধান পান। তাকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজিবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী। এরপর বিভিন্ন নারী সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং গণমাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসে তার গল্প।
১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরত্বের পুরস্কার তুলে দেয়। তার জীবন নিয়ে আনিসুল হকের লেখা বই ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তারামন বিবির স্বামী ছিলেন আবদুল মজিদ। এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply