বরগুনার বেতাগীতে বোরো ধান খেতে মাজরা পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ২-৩ বছরের মধ্যে এ রকম মাজরা পোকার আক্রমণ আর দেখেননি কৃষক। মাজরা দমনে বারবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হলেও তা কাজে আসেনি। এরই মধ্যে খেতের ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত শিষ নষ্ট হয়েছে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা।
বেতাগী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০০ হেক্টর। কিন্তু চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মোট ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বোরো ধান, যা গত বছরের তুলনায় ২ হেক্টর বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও বোরো আবাদ হয়েছে দেশের এ উপকূলীয় জনপদে। অন্যান্য এলাকায় ধান কাটা শেষের দিকে কিন্তু এখনো এখানে পুরোদমে শুরু হয়নি। বোরো ধান কাটার আগেই মাজরা পোকার আক্রমণে থোড়সহ শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শিষ। চলতি মৌসুমে এখানকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র দাবদাহ। এতে বেড়েছে সেচ খরচ। একই সঙ্গে কৃষকের সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি খরচও বেড়েছে। ধান খেতে শিষ বের হওয়ার পর দেখা গেছে থোড় থেকে শুকিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে খরচ বাড়লেও ভালো ফলনের আশা করেছিলেন কৃষক। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্নভঙ্গ হতে বসেছে ধানখেতে মাজরা পোকার আক্রমণে। এ নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তায়।
১টি পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কম-বেশি সব মাঠেই পোকার আক্রমণে ধানের শিষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। খেতের ৩০-৩৫ ভাগ ধানের শিষ এভাবেই মরে গেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও মাজরা পোকার আক্রমণের ফলে শীষের এ দুরবস্থা, যা কোনোভাবেই আর রক্ষা সম্ভব নয়।
স্থানীয় চাষিরা জানান, বোরো আবাদের পর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও যতটুকু তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল মাজরার আক্রমণে তাও শেষ করে দিয়েছে। তাই চাষিরা অন্য বছরের মতো মাজরা দমনে প্রচলিত কীটনাশক প্রয়োগ করেন। তবে কীটনাশকে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় চাষিরা হতাশ। একপর্যায়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিলেও তার আগেই মাজরা দমনের সময় শেষ হয়েছে।
উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের উত্তর করুনা এলাকার কৃষক সুনীল চন্দ্র ব্যাপারী বলেন, ‘আমি গত দুই-তিন বছর ধরে পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলা থেকে বোরো ধানের বীজ এনে এই এলাকায় প্রথম চাষাবাদ শুরু করি। এর আগে ভালই ফলন পেয়েছি এবং আমার দেখাদেখি অনেকেই বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু এবারে আমার ধানের অর্ধেক প্রায় মাজরা পোকা নষ্ট করে দিয়েছে।’
একই এলাকার কৃষক উত্তম সিকদার বলেন, ‘আমার ধান খেতে ব্যাপক মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছে। ধানের শিষ বের হওয়ার পর দেখি শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এলাকার ৪৫ শতাংশ ধান খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পোকার আক্রমণে।’
বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘তীব্র তাপ প্রবাহে বোরোর ক্ষতির পাশাপাশি মাজরার আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আক্রমণ ঠেকাতে তাই কৃষকদের অনুমোদিত ও সঠিকভাবে কীটনাশকের ডোজ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাজারে কম দামে যে কীট নাশক পাওয়া যায় অনেক কৃষকই তাদের পরামর্শ না শুনে ওই কীটনাশক ব্যহার করে। যে কারণে সঠিকভাবে ও সঠিক সময় কাজ করে না। তবে যারা পরামর্শ গ্রহণ করেছে তাদের খেত অনেকটাই ভালো রয়েছে এবং মাজরার আক্রমণে তাদের ফলন বিপর্যয় হবে না। এ বিষয় নিয়মিত মনিটরিং ও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply