চট্টগ্রামে আবারও নতুন করে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। দুসপ্তাহ না পেরোতেই বস্তাপ্রতি প্রায় সব ধরনের চালে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালের। মোটা চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ১০০ টাকা। এ জন্য পাইকাররা দোষ চাপাচ্ছেন মিলারদের ওপর। অপরদিকে মিলাররা দেখাচ্ছেন ধানের দাম বাড়ার অজুহাত। এদিকে দুসপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি পিস লাল ডিমে নতুন করে ৫০ পয়সা ও সাদা ডিমে বেড়েছে ৪০ পয়সা।
চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনের আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে ছিলেন। তখন বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু বাজার মনিটরিং না থাকার সুযোগে নওগাঁ, দিনাজপুর ও রাজশাহীর মিলাররা ধান মজুত করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি বাজারে। অপরদিকে মিলাররা জানান, ধানের দাম প্রতিমণে ৫০০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই বাড়তি দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলী পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দুসপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে মোটা সিদ্ধ চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২ হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৩ হাজার টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ২ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা সিদ্ধ ৩ হাজার ৪০০ টাকা ও বেতী আতপ বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বস্তায় ১৫০ টাকা বেড়ে পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালের দাম। চিনিগুঁড়া চালের মধ্যে নিম্নমানের চালটি দুসপ্তাহ আগে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। অপরদিকে চিনিগুঁড়া ভালো মানের চালে ২০০ টাকা বেড়ে বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮০০ টাকায়।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন আমনের মৌসুম চলছে। এখন তো চালের দাম বাড়ার কথা না। কিন্তু চালের বাজার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।
সুযোগসন্ধানী মিলাররাই চালের দাম বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি এখানেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি আছে।
বাজার মনিটরিং সব জায়গায় বাড়াতে হবে। আর খাদ্য বিভাগ যদি পাইকারি, খুচরা সব ব্যবসায়ীকে ফুড লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসে, তা হলে কেউ নির্দিষ্ট সীমার বাইরে পণ্য মজুত করতে পারবে না। তখন বাজার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আমি মনে করি।’
চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধানের দাম বেড়েছে, তাই মিলাররা আমাদের কাছে বাড়তি দরে চাল বিক্রি করছে। এর প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়েছে।’
নওগাঁ জেলায় নবান্ন অটো রাইস মিলের মালিক মো. সজিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘কৃষক পর্যায়েই ধানের দাম বেড়ে গেছে। আগে আমরা প্রতিমণ ধান ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে কিনতাম। বর্তমানে ধানের ভরা মৌসুমে সে ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। তাই এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে।
লাল ডিমে ৫০ পয়সা ও সাদা ডিমে বেড়েছে ৪০ পয়সাএদিকে দুসপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে ডিমের দাম। আর এই দাম বাড়ার পেছনে আড়তদাররা দেখালেন চাহিদা বাড়ার অজুহাত।
চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলীতে বেশির ভাগ ডিম আসছে টাঙ্গাইল থেকে। প্রতিদিন গড়ে ১৪ থেকে ১৫টি ট্রাকে করে ডিম প্রবেশ করছে এসব বাজারে। প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজার পিস ডিম থাকে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে নগরের পাহাড়তলী বাজারে প্রতি পিস লাল ডিম ৯ টাকা ৬০ পয়সা ও সাদা ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ১০ পয়সায়। বর্তমানে প্রতি পিস লাল ডিম ১০ টাকা ১০ পয়সা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply