গেছে, জেলার ১৬৫টি চর ও নিন্মাঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফশল ভুট্টা, মরিচ, আলু ও সরিষার মৌসুমের শুরুতেই সারের বাড়তি দামের সিন্ডিকেটে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আমীর আলীর সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৪ একর জমিতে ভুট্টা, আলু, রসুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন তিনি। সারের বাড়তি দামে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে তার। সারের অতিরিক্ত দামে উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে পরিমাণের চেয়ে দিচ্ছেন অল্প সার।
তারা জানান, নদী তীরবর্তী হাট ভরতখালি বাজার ও ফুলছড়ি হাটের ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দাম না নিয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। তাদের মনগড়া নির্ধারিত দাম না দিলে দিচ্ছেন না সার।
একই অভিযোগ ওই এলাকার বিভিন্ন কৃষকসহ পাশের ফুলছড়ির উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের বাঙ্কের চরের কৃষকদের।
একই চিত্র জেলার আর সব এলাকারও। কৃষকদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে মৌসুমের বেশি প্রয়োজনীয় ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি), ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ইউরিয়া সার অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন।
সরকারিভাবে এক বস্তা (৫০ কেজি) ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ১ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও কৃষকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। একইভাবে ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। মিউরেট অব পটাশও (এমওপি) প্রতি বস্তা ১ হাজার টাকা বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। ইউরিয়া প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
অভিযোগ আছে, কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেয়া হলেও ডিলাররা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। কেউ কেউ রসিদ দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দাম দেখাচ্ছেন। সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার দিচ্ছেন। ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনেক কৃষক চাহিদার অর্ধেক সার ব্যবহার করছেন।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আমীর আলী জানান, ‘সরকার নির্ধারিত দামে সার চাইলে ডিলাররা সার দিতে চায় না। তাদের মনের মতো দাম দিলে সার দেয়। এতে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
ফুলছড়ির উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের বাঙ্কের চরের কৃষক রমজান আলী জানান, চর ও নিন্মাঞ্চলের একমাত্র অর্থকরী ফশল ভুট্টা। এখন সে ভুট্টা লাগানোর সময় এসে সার ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সার দিচ্ছেন না। সরকারি কর্মকর্তারা যদি নিয়মিত এসব দেখাশুনা করতেন তাহলে সারের বাড়তি দাম নিতে পারতো না।
তবে অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছে ডিলাররা। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি ডিলাররা বস্তা প্রতি অতিরিক্ত দাম নেয়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হাট ভরতখালি বাজারের মেসার্স সুশীল কুমার চৌধুরী সার ডিলারের ম্যানেজার বিপ্লব সরকার জানান, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তারা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা এটি করতে পারে তবে সেটিও তারা জানেন না।
একই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. ফরিদ মিয়া জানান, ডিলার পয়েন্ট থেকে সার আনা নেয়ার খরচ ও খুচরা বিক্রি করতে অনেক ঘাটতি হয়। যে কারণে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেশি নেয়া হয়। এর বেশি নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে জানিয়ে জেলার সাঘাটা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ জানান, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কিংবা বাড়তি দাম নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকের কাছে সরকারি মূল্য ও চাহিদামত সার সরবরাহে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু, ২ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে মরিচ ও ১৯ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply