ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে দলটি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আরও দলের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে।
একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ছিল খেলাফত মজলিস। ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তারা জোট ছেড়ে যায়। তিন বছর পর গতকাল দল দুটির শীর্ষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির নয়জন নেতা বৈঠকে অংশ নেন
বিএনপি তার পুরোনো জোটসঙ্গী খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এমন সময় বৈঠক করল, যখন এক দিন আগে গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বরিশালে চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তাঁরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। অবশ্য বরিশালে জামায়াতের আমিরের দলীয় সমাবেশ ছিল। এর ফাঁকে তাঁরা চরমোনাইতে মিলিত হন। যদিও ইসলামপন্থী এ দুটি দলের মধ্যে আদর্শিক বিরোধ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর দল দুটিকে পরস্পরের প্রতি নমনীয় দেখা যায়। এর মধ্যেই জামায়াতের কোনো আমির ও বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাইয়ের পীর বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। পরস্পর বৈরী দল দুটির এই সম্পর্কোন্নয়নকে আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছি। এটা তারই অংশ। যদিও বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক। জামায়াত আমিরের বরিশালে কর্মসূচি ছিল। তবু দুই দলের আমিররা বৈঠক করেছেন, একসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। এর একটা তাৎপর্য আছে। আমরা এটাকে শুভসূচনা বলেই মনে করি।’
গতকাল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির ও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের বৈঠকের বিষয়টি ব্রিফিংয়ে সামনে আনেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন দলের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যাঁরাই রাজনীতি করেন, তাঁরা তাঁদের রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাঁদের সঙ্গে মতের মিল হবে, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার চিন্তা করতে পারেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা থাকার তো কোনো কারণ নেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একসময় এক দল আরেক দলের বিরোধিতা করেছে, সমালোচনা করেছে, আবার আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা একমত হয়েছে। এতে অস্বাভাবিক কী আছে! আজকে যারা একমত, কালকে তারা একমত না-ও হতে পারে। তাতে অবাক হওয়ার কী আছে! কাজেই এ বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার বা মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারা (জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন) তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে যা উচিত মনে করবে, নিশ্চয়ই তা করবে।’
অবশ্য চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে এ বৈঠকটিকে ‘চূড়ান্ত কিছু নয়’ বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েই গিয়েছি (চরমোনাইয়ের পীর), তাঁরাও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। এটা চূড়ান্ত কিছু নয়, আমরা সমঝোতায় এসে গেছি—এ রকমও নয়। বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, তাঁরাও ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply