কোরবানির প্রস্তুতির সময় শরিয়াহর কিছু নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি, যাতে এই ইবাদতের পূর্ণতা ও তাৎপর্য বজায় থাকে। তার মধ্যে একটি হলো, যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে চান, তাঁর জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিনে চুল-নখ না কাটা। এ সময় চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব (উত্তম)।
চুল-নখ কাটার বিধান কী
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ ইবনে বাজ বলেছেন, ‘যদি কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে এবং জিলহজ মাস শুরু হয়—হয় নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে, অথবা জিলকদ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর—তবে তার জন্য কোরবানি জবাই না করা পর্যন্ত চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।’
এই নির্দেশনার ভিত্তি হলো হজরত উম্মে সালামার (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের নতুন চাঁদ দেখবে—অথবা ১০ দিন শুরু হবে—এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭; মুসনাদে আহমাদ; হাদিস: ২৬,৬৬১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের নতুন চাঁদ দেখবে—অথবা ১০ দিন শুরু হবে—এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭; মুসনাদে আহমাদ; হাদিস: ২৬,৬৬১)
মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তার চুল বা ত্বকের কিছুই স্পর্শ করা উচিত নয়।’
যে ব্যক্তি কোরবানি করবে না, তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না—এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, কোরবানি যারা করবে না, তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.)-এর বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে কোরবানির দিবসে ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক সাহাবি বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু এমন একটি পশু থাকে যা দুধ পানের জন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে, আমি কি তা কোরবানি করব?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না, তবে (দশ দিন পরে) তুমি চুল, নখ ও গোঁফ কাটবে এবং অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৭৮৯; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৪,৩৬৫)
এই নিষেধের কারণ
এই নিষেধের পেছনে একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। যে ব্যক্তি কোরবানি দেয়, সে হজের কিছু আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়, যেমন কোরবানি করা হজের অংশ। এই সময়ে চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকা ইহরামের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা হজ পালনকারীরা মেনে থাকেন। এটি কোরবানিকারীর ইবাদতের প্রতি নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ।
এই নিষেধ শুধু সেই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যিনি নিজে কোরবানি জবাই করবেন। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে, যেমন পরিবারের সদস্য বা অন্য কেউ, তাদের ওপর এই নিষেধ প্রযোজ্য নয়। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি দিতে চায়…’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭)। এখানে ‘যে কোরবানি দিতে চায়’ বলতে জবাইকারী ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যার পক্ষে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে তাদের নয়। রাসুল (সা.) নিজে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতেন, কিন্তু তাদের চুল বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই কোরবানিকারীর পরিবারের সদস্যরা জিলহজের প্রথম দশ দিনে চুল, নখ বা ত্বক কাটতে পারেন।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply