আসছে বাজেটে আইসিটি খাত, রপ্তানিমুখী পোশাক ও চামড়াশিল্প, এলপিজি ও মোবাইল ফোনশিল্পের করছাড় তুলে দিতে কঠোর অবস্থানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে সংস্থাটি কোনো ব্যবসায় বার্ষিক ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সঙ্গে তাদের আগের শর্ত পরিপালন পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে এসব বিষয়ে সংস্থাটি তাদের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে। এ সময় এনবিআরও ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার আগে সংস্থাটির দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরে। এনবিআর কর ফাঁকি ধরা ও রাজস্ব আয়ের পূর্বাভাস তৈরির কৌশল ঠিক করতে সংস্থাটির সহায়তাও চেয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আইএমএফ আসছে বাজেটেই বাস্তবায়ন করতে হবে এমন কিছু বিষয় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তুলে ধরে। এতে বলা হয়, আসছে বাজেটেই বাড়তি জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করার ঘোষণা থাকতে হবে। একই সঙ্গে কীভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়ানো যায়, তার একটি দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে, যা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আসছে বাজেট থেকেই সব বড় কোম্পানির ই-রিটার্ন ও অনলাইনে করের টাকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। না হলে ওই সব প্রতিষ্ঠান করছাড় ও রেয়াতি হারে কর দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
আইএমএফ তাদের উপস্থাপনায় আসছে অর্থবছরের পর আর কোনোভাবেই ওই খাতে দেওয়া কর অবকাশের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে নয়। আইসিটি খাতের কর অবকাশ আসছে জুনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। সংস্থাটি এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। তৈরি পোশাক খাত, চামড়া খাত, এলপিজি ও মোবাইল ফোন তৈরি শিল্প খাতে শুল্ক-কর ও ভ্যাট রেয়াত-সুবিধা দেওয়া আছে। আইএমএফ মনে করে, এসব সুবিধা আর থাকা উচিত নয়।
এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে তারা এসব প্রস্তাব ও শর্তের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। পরে এনবিআরের পক্ষ থেকেও তাদের শর্তের বাস্তবায়ন ও সামনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার একটি পৃথক উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। ওই উপস্থাপনা থেকে জানা যায়, এনবিআর আইএমএফের দেওয়া শর্তের বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।
কিছু সামনে বাস্তবায়ন করা হবে। বাড়তি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আসছে বাজেটে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে, সক্ষম করদাতাকে করের জালে আনতে বাধ্য করা, ঢালাও কর অবকাশ কমিয়ে আনা, কর ফাঁকি কমিয়ে আনা, নতুন করদাতা খুঁজে বের করা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনলাইন সম্পৃক্ততা বাড়ানো।
এনবিআর জানায়, কর ফাঁকি কমাতে এরই মধ্যে এনবিআর সাময়িকভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করে সংশ্লিষ্টদের তা তদারকির দায়িত্ব দিয়েছে। আরও তিনটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। নিরীক্ষা ম্যানুয়াল উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অর্থায়নের ব্যাপারে কথা হচ্ছে।
আসছে বাজেটে আইএমএফের চাপে রাজস্ব ক্ষতি কমিয়ে আনতে করছাড় তুলে দেওয়ার বিষয়ে আয়কর বিশেষজ্ঞ ও এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ঢালাও কর অবকাশ কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে ঢালাও হলে তা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পোশাকশিল্পসহ অন্য কিছু খাত রয়েছে যেগুলোর ওপর অল্প অল্প করে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কর বসানো যেতে পারে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply