অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের (সিন্ডিকেট) ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণে অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। ক্রেতাদের অভিযোগ, গরিবের আমিষ খ্যাত ডিমের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এক হালি ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়; যা খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকায় পৌঁছেছে
হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে জেলা পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা। তবে খুচরা বিক্রেতারাও সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদারীপুর, ফরিদপুর ও রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
মাদারীপুর: মাদারীপুরে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, জেলার দুজন বড় ব্যবসায়ী হিমাগারে লাখ লাখ ডিম মজুত রেখে ইচ্ছামতো মূল্য বাড়াচ্ছেন। উৎপাদন সংকটের অজুহাতে সিন্ডিকেটটি গত এক মাসে ডিমের মূল্য হালিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি বাড়িয়েছে। এ নিয়ে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, শহরের বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরেই মাদারীপুর হিমাগার। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা খালি থাকায় মার্চ থেকে ডিম মজুত শুরু করে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ডিম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কাজী ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরা হিমাগারে ডিম মজুত রেখে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। তা ছাড়া জেলায় তেমন একটা ফার্ম না থাকার সুযোগে ডিম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো ডিমের দাম বাড়ান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর জেলার সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস মাদারীপুরের হিমাগারে অভিযান চালান। এ সময় হিমাগারে সাড়ে ৬ লাখ ডিম মজুত পাওয়া যায়। সে সময় শহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কাজীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই দিনের মধ্যে হিমাগার খালি করে বিক্রি করার শর্ত দেওয়া হয়। এরপরও মাদারীপুরে ডিমের দাম কমছে না। এক হালি ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা; যা খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পুরান বাজারের ডিম ক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা এখন বিপদে পড়েছেন। হঠাৎ ডিমের হালি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।’
শহরের শকুনি এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী শফিক হোসেন বলেন, ‘ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট চলছে। বড় বড় ব্যবসায়ী হিমাগারে ডিম মজুত রেখে দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদেরও ডিম বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই আমাদেরও বেশি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে।’
ডিম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাদারীপুর জেলার কোথাও ডিমের ফার্ম নেই। এই ডিম অন্য জেলা থেকে কিনে আনতে হয়। সে ক্ষেত্রে খরচ বেশি। তাই দামও বেশি পড়ে যায়। বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। তাই একটু দাম বেড়েছে।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ডিম মজুত করে রাখার অভিযোগ প্রমাণ পেলে ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ফরিদপুর: ফরিদপুরে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে ডিমের মূল্য আকারভেদে ইচ্ছামতো নির্ধারণ করা হচ্ছে। অপরদিকে গ্রাম পর্যায়ে ছোট ছোট খামারি পাইকারিতে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করছেন। এ ছাড়া আলু ও পেঁয়াজের দামেও মানভেদে নির্ধারণ করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর শহরের কয়েকটি বাজার ও কয়েকটি গ্রামের বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুচরা বাজারে লাল ফার্মের মুরগির ডিম ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আকারে বড় ডিম প্রতি হালি ৬০ টাকা ও আকারে ছোটগুলো ৫৫ টাকায় হালি বিক্রি হচ্ছে। শহরের পূর্ব খাবাসপুরে একটি খুচরা দোকানেও আকারভেদে ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়। শহরের হাজি শরিয়াতুল্লাহ ডিম বাজারেও একই চিত্র দেখা যায়।
এসকেন্দার মোল্যা নামে এক ডিম বিক্রেতা বলেন, ‘খামার থেকে ১০০ ডিম ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছি। আনার সময় অনেক ডিম ভেঙেও যায়। এ জন্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছোট-বড় আলাদা করে বিক্রি করা লাগে।’
রাজশাহী: উৎপাদিত ডিম কেনা এবং পরে ঢাকায় পাঠানোর জন্য বেশ কিছু আড়ত গড়ে উঠেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার মোসলেমের মোড় এলাকায়। বছর দুয়েক আগেও রোজ এই মোড় থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ডিম যেত ঢাকায়। আর এককভাবে এখানে ডিমের দাম নির্ধারণ করত রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (আরপিডিএ) নামের একটি সংগঠন।
স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, আরপিডিএ ডিমের দাম নির্ধারণ করে দুপুর ১২টার মধ্যে আড়তদার ও খামারিদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দিত। সে দামেই সারা দিন চলত ডিম কেনাবেচা। কিন্তু সম্প্রতি আরপিডিএর নির্ধারণ করে দেওয়া দামই চূড়ান্ত থাকছে না। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে এখন আবার দাম নির্ধারণ করছেন। খামারে খামারে তাঁরা গাড়িও পাঠাচ্ছেন ডিম কিনতে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply