দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টিতে (জাপা) বিভাজন স্পষ্ট হয়ে পড়েছিল। রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীদের বাইরে রেখে নির্বাচনে অংশ নিলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। গত মার্চে আলাদা সম্মেলন করে দলের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন রওশনপন্থীরা। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ জাপার নেতা হলেন রওশন এরশাদ। যদিও গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা বলেছে, তারাই মূল দল।
কাজী ফিরোজ রশিদ, আবু হোসেন বাবলাসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় জি এম কাদেরের শক্তি অনেকটা কমে গেছে বলে দলের লোকজনই মনে করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে ব্যর্থতা ও ভাঙনের ফলে জাপা এতটাই বেহাল যে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় জি এম কাদেরের জন্য দল টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই জি এম কাদের দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তৎপরতা বাড়িয়েছেন। বক্তব্যও দিচ্ছেন সেই আলোকে।
জি এম কাদের গত ২৭ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় বলেন, সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়, যা কখনো সম্ভব নয়। একই সভায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও বলেন, আওয়ামী লীগ চায় না দেশে অন্য দল থাকুক। জাতীয় নির্বাচনের পর এটি ছিল জাপার প্রথম বর্ধিত সভা।
জাপার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার করুণ অভিজ্ঞতার কারণে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দলটির নেতারা। দুই ধাপের নির্বাচনে জাপার মাত্র আটটি ফরম বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও এমপিদের প্রভাব বিবেচনায় জাপার নেতারা প্রার্থী হতে চাইছেন না।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা ২৬ আসনে সমঝোতা করলেও ১১টিতে জয় পেয়েছে। নির্বাচনের পর দলের প্রথম বর্ধিত সভা শেষে জি এম কাদের বলেছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের কারণে জাপা নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনে না গেলে আগেই দল ভাঙার হুমকি ছিল সরকারের দিক থেকে।
জি এম কাদেরের এমন বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য কোনো চাপ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
জাপার একাধিক সূত্রের দাবি, নির্বাচনের পর থেকেই জি এম কাদের সরকারি বলয়ের বাইরে বেরোতে চাইছেন। সরকার বা আওয়ামী লীগ আর জি এম কাদেরকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে কারণেই সরকারি হস্তক্ষেপে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দল ভাগ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, জাপার বর্ধিত সভায় মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ নেতাও দল পুনর্গঠন এবং সরকারি বলয় থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ আসনে জাপার প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে যেন আমরা একাই নির্বাচন করতে পারি, সে বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, ওই সভায় জি এম কাদের বলেন, সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে। এ অবস্থায় তিনি জনগণের ওপর ভরসা রেখে রাজনীতি করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘১২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমাদের সব জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। সংগঠনে যে ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা, তা কাটিয়ে চাঙা করা হবে।’
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply