স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরে উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় সম্পদের পুনর্ব্যবহারে জোর দিতে হবে। আর পারমাণবিক ও সৌরবিদ্যুৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ব্লক চেইনের মতো প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। দিনভর শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসন শীর্ষক ১৫টি কর্ম অধিবেশন হয়। এতে অংশ নেন অর্থনীতি সমিতির সদস্য ও অর্থনৈতিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
অধিবেশনে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। তবে এ খাতে সম্পদের পুনর্ব্যবহার বা সার্কুলারিটি আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বর্তমান বাস্তবতায় সম্পদের পুনর্ব্যবহার না বাড়ালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাকের বাজার ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে এবং প্রবৃদ্ধিও টেকসই হবে না।
ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বৈশ্বিকভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ক্রমে বাড়ছে। ফলে টেকসই উন্নয়নের জন্য সম্পদের পুনর্ব্যবহারের ওপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতা দেশগুলো সার্কুলারিটি বিষয়ে নানা ধরনের নীতিমালা তৈরি করছে।
বিল্ড সিইও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রতিবছর প্রায় ৫৮ লাখ টন বস্ত্র ফেলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে, দেশে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বছরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মাত্র একটা অংশ রিসাইকেল হয়। ফলে এ জায়গায় কাজ করার প্রয়োজন আছে।
ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরে পণ্য উৎপাদনে পরিবেশগত বিষয়গুলো প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সম্পদের পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধির বিকল্প নেই। পণ্য উৎপাদনের শুরুতেই এমনভাবে নকশা করতে হবে, যেন পণ্যটি ভবিষ্যতে পুনর্ব্যবহার করা যায়।
কর্ম অধিবেশনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কথা বলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। তারা পণ্য উৎপাদন ও পরিষেবায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক ও সৌরবিদ্যুৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ব্লক চেইনের মতো প্রযুক্তি। সে তুলনায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। সুতরাং, বাকি বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।
মো. আনিসুর রহমান বলেন, বাকি বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে এআই ব্যবহারের বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে উদ্ভাবন ও উৎপাদনে এআইয়ের ব্যবহার এখনো সীমিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেকে চাকরি হারানোর ভয় করছেন। কিন্তু সরকার কর্মপরিকল্পনা করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগোলে এআইয়ের ইতিবাচক সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে।
সিলেট সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. খায়রুল আলম টাঙ্গুয়ার হাওরের মানুষদের জীবিকার সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এখানকার মানুষেরা মূলত মৎস্য ও কৃষিজীবী। তাঁরা বছরে ৬-৭ মাসই কর্মহীন থাকেন। অন্যান্য কাজের দক্ষতা না থাকায় বাইরে কাজ পান না। তাঁদের মূল ধারার অর্থনীতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply