ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ সফল করতে হলে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে। এই ক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানি খাত বিরাট অবদান রাখতে পারে। এই সেক্টর নিয়ে অনেক দুর্নাম আছে, অথচ চাইলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনা টাকায়, বিনা হয়রানিতে বিদেশে লোক পাঠানো সম্ভব। কিন্তু এই বিষয়ে সরকার ও বায়রার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিল চাকরির দাবিতে, তাই ছাত্রদের চাওয়া আর আমাদের চাওয়া অভিন্ন।
ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ সফল করতে হলে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে। এই ক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানি খাত বিরাট অবদান রাখতে পারে। এই সেক্টর নিয়ে অনেক দুর্নাম আছে, অথচ চাইলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনা টাকায়, বিনা হয়রানিতে বিদেশে লোক পাঠানো সম্ভব। কিন্তু এই বিষয়ে সরকার ও বায়রার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিল চাকরির দাবিতে, তাই ছাত্রদের চাওয়া আর আমাদের চাওয়া অভিন্ন।
ইউরোপ ও উন্নত দেশে কর্মী প্রেরণ সংগঠন রাবিড ও রাষ্ট্রচিন্তা আয়োজিত জনশক্তি রফতানি খাতের সংস্কার বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এইসব কথা বলেন। সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল পাঁচ টায় রাবিড কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্টিত হয়।
রাবিডের সভাপতি আরিফুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। রাবিডের পক্ষ থেকে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা পারভীন আক্তার, আব্দুল আজিজ, মো. ইলিয়াস হোসেন, শান্ত দেব সাহা, মো. শাহরিয়ার, প্রেমিত খন্দকার, গাজী ফরহাদ হোসেন, মাজেদা আক্তার সেতু, জাহাঙ্গীর আলম তুষার, মো. শাইখুই ইসলাম, সীমা আক্তার, ইউসূফ, শেখ শিউলী, মাহাবুল হোসেন, বোরহান উদ্দীন শেখ, মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ। আরো উপস্থিত ছিলেন ডিরেক্টর, ডেডিকেশন ইউরোপ কনসালটেন্সি ও রাবিড বিজনেস কনসালট্যান্ট জাকির হোসেন পাটোয়ারী, রাবিড ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের জাপানি ভাষার প্রশিক্ষক আমেনা বেগম নিতু।
রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে ছিলেন অধ্যাপক আল রাজী, চারু হক, দিদারুল ভুঁইয়া, প্রীতম দাশ, আহমেদ রিয়াজ, সাকলায়েন গৌরব।
সফটওয়্যার কোম্পানি ওপাসের হেড অফ ফিনান্স এন্ড অপারেশন রাশেদুল ইসলাম, বিজনেস এক্সিকিউটিভ তানভীর ইশতিয়াক।
প্রবাসন সম্পাদক খোকন দাস, সাংবাদিক হাসান চৌধুরী খালেদ, মেহেদী হাসান।
আলোচনার এক পর্যায়ে সফটওয়্যার কোম্পানি ওপাসের পক্ষ থেকে আলোচ্য সফটওয়্যার নিয়ে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরা হয়।
রাবিড সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ‘ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ সফল হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। জনশক্তি রফতানি খাত এই ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দিকনির্দেশনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
প্রতিবছর ২০/২৫ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, কাজের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে মাত্র চার লাখ লোকের। বাকীরা বেকার থেকে যাচ্ছে। এই লোকগুলোকে আমারা বিদেশে পাঠাচ্ছি। জনশক্তি রফতানি খাতের মাধ্যমে অর্থনীতির দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব।
আমাদের দেশে দক্ষ মানুষের সংখ্যা এখন বেড়েছে, তাদের টাকাও বেড়েছে, তাই তারা ইউরোপে যেতে চায়। এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশাল শ্রমবাজার আছে।
আমাদের এই সেক্টরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশি। অথচ কর্মী নিয়োগকারী কোন দেশের কোন কোম্পানি ভিসার দাম নেয় না। ওইসব দেশের অনেকগুলো মিডলম্যানের হাত ঘুরে ভিসা আসে আমাদের কাছে। এখানে আবার শহরের এজেন্ট, গ্রামের এজেন্ট হয়ে ভিসার দাম বেড়ে যায়। অথচ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবস্থায় কোন টাকা ছাড়াই লোক পাঠানো সম্ভব। আমরা যারা লোক পাঠাচ্ছি তারা সার্ভিস চার্জ পাবো। রাবিড এই লক্ষে গঠিত হয়েছে এবং কাজ করছে। আমরা একটা সফটওয়্যার ডেভেলপ করছি।
তবে এখনই মিডলম্যান দূর করা যাবে না। আপাতত দুটো পদ্ধতিই থাকতে পারে, একসময় অনলাইন পদ্ধতি জনপ্রিয় হলে মিডলম্যান ছাড়াই পুরোপুরি অনলাইনে চলে যেতে পারবো।
আরিফুর রহমান বলেন, আপনারা জানের রাবিড ট্রেনিং সেন্টার ও ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। আমাদের এখানে অনেক ট্রেনিং সেন্টার আছে, কিন্তু সেখানে কারা ট্রেনিং করে? যেসব কোম্পানি কর্মী নিতে চায় তাদের চাহিদা কি, আর ট্রেনিং সেন্টারগুলো কি চায় তার মধ্যে কোন মিল নেই, তাই এইগুলো কোন কাজে আসছে না। এখন অনেক দেশে ভাষা শেখা ছাড়া যেতে পারে না। যেমন জাপান ও কোরিয়ায় যেতে অবশ্যই ভাষা জানতে হয়। সামনে ভাষা শেখা আর দক্ষতা ছাড়া বিদেশে যেতে পারবে না। তাই আমাদেরকে প্রস্তত হতে হবে। রাবিড এইগুলো বিবেচনা করে ট্রেনিং সেন্টার ও ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা বলেছি, আমাদের স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোন একটা বিদেশি ভাষা শেখাতে হবে।
সৈয়দা পারভীন আক্তার বলেন,‘ প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা, প্রবাসীরা যদি রেমিট্যান্স যোদ্ধা হয়, আমরা সেই যোদ্ধা তৈরির কারিগর। কিন্তু এই সেক্টরকে, এই সেক্টরের কারিগরদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই প্রথম দেখলাম এ সেক্টরের বাইরের কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই জন্য আমরা রাষ্ট্র চিন্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’
দিদারুল ভুঁইয়া বলেন, ‘কোন ধরনের খরচ ছাড়া অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাইরে লোক পাঠানো যাবে এটা বৈপ্লবিক কথা, আপনাদের বাইরে কেউ এটা বলেনি। আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে যায় তারা আন্ডারমাইন্ড হয়ে থাকেন, অথচ তাদের মাথানিচু করে থাকার কথা নয়। তারা নিজেদের জন্য যায় না, যায় পরিবারের জন্য। কিন্তু যাওয়ার সময় তারা যাবতীয় জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়ের শিকার হন। এটা পুরানো আলাপ, নতুন আলাপ হবে ভিন্ন। নতুন আলাপ হচ্ছে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবে, বিদেশে আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকবে। আগে মানুষের জন্য রাষ্ট্র ছিল না, ছিল জুলুমের, কিছু মানুষের লুটপাটের, বিদেশে টাকা পাচারের। নতুন বাংলাদেশে আমরা এমন চাই না। এই সরকার ব্যর্থ হওয়া কারো জন্য কাম্য না। সরকার ব্যর্থ হবে না, যদি সে জনগণের জন্য কাজ করে। আমাদের উচিত বিভিন্ন সেক্টরে যে নলেজ আছে সে নলেজ দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা।’
প্রীতম দাশ বলেন.‘ আমরা দেখি প্রবাসে যারা যায় তারা একটা পক্ষ, আর সবাই মিলে একটা পক্ষ। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে মানুষ অন্যভাবে দেখে। এখানে দেখছি এজেন্সিগুলোর একটা সংগঠন বিনা খরচে লোক পাঠানোর কথা বলছে, এটা কখনোই শুনিনি। ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছে তা শুরুতে ছিল চাকরির জন্য আন্দোলন। সেই আন্দোলন এমন জায়গায় গেল শেষ পর্যন্ত সরকারকে পালিয়ে যেতে হলো। ফলে তরুণদের চাওয়ার সঙ্গে আপনাদের চাওয়া অভিন্ন।
মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমাদেরকে এই আলোচনা ছড়িয়ে দিতে হবে। জেলা, উপজেলা, এমনকি থানা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, বুঝাতে হবে যে অনলাইনে বিনা খরছে মিডলম্যান ছাড়াই বাইরে যাওয়া যায়। এতে মিডলম্যানদের দৌরাত্ম্য কমবে।
শান্ত দেব সাহা বলেন, রাষ্ট্রচিন্তা ধৈর্য নিয়ে আমাদের কথাগুলো শুনেছে এর জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কেবল রাষ্ট্রচিন্তা নয়, আরো যারা আছে সবাই মিলে যদি সমস্যাগুলো তুলে ধরি তা হলে অবশ্যই সমাধান হবে।
হাসান চৌধুরী খালেদ বলেন, আগের সরকার লুটপাট করার কারণে আমাদের মাথাপিছু ঋণের বোঝা বেড়েছে। সরকার যদি বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ দেয় তবে এই ঋণের বোঝা বইতে কোন আপত্তি নেই। দেশে যদি কোন মেগা প্রজেক্ট হয়, সেটা হবে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয়ে।
আহমেদ রিয়াজ বলেন, রাষ্ট্র চিন্তা আগে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারের বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে, এখন অর্থনৈতিক বিষয়েও মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে এই সেক্টর নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা যাবে।
জাহাঙ্গীর আলম তুষার বলেন, ইউরোপ ও উন্নত দেশে বিশাল মার্কেট আছে, মধ্যপ্রাচ্যের চেয়েও অনেক বড় মার্কেট। সেই মার্কেটে আমরা ঢুকতে পারছি না। সেই মার্কেটে ঢোকার জন্য আমরা রাবিড গঠন করেছি। এর জন্য ভাষা শিক্ষা ও ট্রেনিংএর উপর জোর দিচ্ছি।
মো.শাহরিয়ার বলেন, রাবিড একটি ব্যবসায়ীক সংগঠন। সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া আমাদেরকে টেকনিক্যালি সাপোর্ট করুন। দেশে অনেক ট্রেনিং সেন্টার আছে, কিন্তু সেগুলো কোন কাজে আসছে না।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply