রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে এবার। কোনো কোনো পণ্যের আমদানি গত বছরের চেয়েও বেশি।
এতে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেও দাম নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনি, খেজুর, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা ও পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য বলছে, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০৭ টন চিনি আমদানি হয়েছে।
গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয় ৮০ হাজার ২১২ টন। এই হিসাবে এবার প্রায় সাড়ে ৩৮ হাজার টন বেশি চিনি আমদানি হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ টন, যা গতবারের তুলনায় ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত মৌসুমে আমদানি হয়েছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৩ টন।
আমদানি বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান দামের ক্ষেত্রে কোনো সুখবর দিতে পারছে না ভোক্তাদের। যদিও আমদানি কমলে সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে দফায় দফায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ান ব্যবসারীয়া।
ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এখন ভালো মানের ছোলা প্রতি কেজি ৯১, মাঝারি মানের ৮৩ থেকে ৮৮ এবং নিম্নমানের ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া চিনি প্রতি কেজি ১৩৪ এবং সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৬ ও পাম অয়েল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-৮৫ ও মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে।
ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে উল্লিখিত পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক মেসার্স এ জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম বলেন, এবার ছোট-বড় আমদানিকারকেরা মিলে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন।
এ কারণে রমজানে বাজারে পণ্যের কোনো সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখছি না। তবে ডলারের সংকট ও ডলারের বাড়তি দামের কারণে এবার পণ্যের আমদানি খরচ আগের তুলনায় অনেক বেশি।
রমজান সামনে রেখে এবার গত মৌসুমের তুলনায় ১০২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। আমদানির পরিমাণ ৪৯ হাজার ৫১৫ দশমিক ৯৭ টন, যা গত মৌসুমে ছিল ২৪ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৮১ টন।
গতবারের তুলনায় এবার পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছে ৪১ হাজার ৮৩৪ টন। তবে গত সাড়ে তিন মাসে খেজুর আমদানির চিত্র নেতিবাচক।
১০ হাজার ৭৯ দশমিক ৯৩ টন খেজুর আমদানি হয়েছে এই সময়ে, যা গত মৌসুমের একই সময়ে ছিল ২৪ হাজার ৭৬০ দশমিক ৩৩ টন। এই হিসাবে এবার ২৩ হাজার ৬৮০ দশমিক ৪ টন খেজুর কম আমদানি হয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ডলারের সংকটের কারণে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বাজারে পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী জানান, ‘সার্বিক বিবেচনায় রমজানে চাহিদা থাকা ভোগ্যপণ্যগুলো গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। আরও আমদানি পণ্য আসছে। এবার সংকট হওয়ার কারণ দেখছি না।’
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply