জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচানো, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নকে গড়তে শিল্প-কারখানা নির্মাণে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১১ তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য (এসএমই) মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সকলকে করতে হবে এবং সেটা মেনে নিতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যাল ব্যবহারের ওই পয়সাটা বাঁচাতে গিয়ে, দেশের সর্বনাশ, সাথে সাথে নিজের সর্বনাশটা কেউ করবেন না-সেটা আমার অনুরোধ থাকল।’
আমাদের দেশ ‘ভৌগোলিক সীমারেখায় ছোট এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দেশের পরিবেশ ও সবকিছু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। সাথে সাথে জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের শিল্প খাতকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে চাই। কারণ শিল্প খাত একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা যেখানেই কোনো শিল্প গড়ে তুলবেন, সেখানে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন-আপনার ওই শিল্পের বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে। আমাদের পানি যেন কোনোভাবে দূষণ না হয়, মাটিতে দূষণ যেন না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব আনন্দিত! কেন না আজকের এসএমই পণ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে-উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশই নারী।’
নারীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজের একটা অংশকে বাইরে রেখে সেই সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দেশের নারী-পুরুষ সকলকেই যদি আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারি, তাহলে সমানভাবে দেশটা দ্রুত উন্নত হবে। এ জন্য নারী উদ্যোক্তা আমাদের দরকার।’
যেহেতু শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে পুরুষেরা ঘরের নারীদের (স্ত্রী-কন্যা-বোন) নামে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে যুক্ত হতে পারেন বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, ‘কেন না অন্যত্রতো আর ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। কাজেই পুরুষেরা, বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজ-এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ আমরা চাই আমাদের শিল্প খাতে আরও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সুচকে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৫শ ৪৩ মার্কিন ডলার।’
কোভিড-১৯ অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে ঘিরে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাবে মূল্যস্ফীতি না ঘটলে, এটাকে আরও উন্নতি করা যেত বলেও তিনি অভিমত দেন। এর সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩’ বিজয়ী সাতজন মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান।
২০২৩ সালের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের পক্ষে ‘রংপুর ক্রাফটস’ এর স্বত্বাধিকারী স্বপ্না রানী সেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply