সাধারণ মানুষের মনে ক্রিকেট নিয়ে যে উদ্দীপনা, দেশের আর কোনো খেলার ক্ষেত্রেই সে উদ্দীপনা নেই।
জাতীয় ক্রিকেট দলের যে ব্যতিব্যস্ততা, তার ধারেকাছেও নেই দেশের অন্যান্য খেলার আর কোনো দলের।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্য কোনো দলকে নিয়ে বড় কিছু আশা করা কঠিন।
নীতিনির্ধারকদের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব আর অব্যবস্থাপনায় একরকম স্থবির হয়ে পড়েছে ক্রিকেটের বাইরের অন্যান্য খেলা। স্থবির হয়ে পড়া এসব ক্রীড়ায় নাজমুল হাসান পাপনকে ঘিরে যদি এবার প্রাণ ফেরে!
বঙ্গভবনে গত পরশু যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন। শপথ নিয়েই নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন।
গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
জুমার নামাজের পরপর বনানী কবরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে পাপন বলেছেন, এবার শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাধুলাই দেখভাল করবেন, ‘অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং, যেকোনো মন্ত্রণালয়ই চ্যালেঞ্জিং।
এত দিন ক্রীড়ার সঙ্গেই ছিলাম, তবে শুধু ক্রিকেট নিয়ে। কাজেই এখন তো শুধু ক্রিকেট না, সব খেলাধুলাই দেখতে হবে, তার সঙ্গে যুবও।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫৫টি ক্রীড়া ফেডারেশন। ৮০-৯০-এর দশকে ফুটবল-হকির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
সেই সব এখন শুধুই স্মৃতি। আর্চারি-শুটিংয়ে মাঝেমধ্যে আসে অর্জন। পাপনের মতে, কয়েকটি খেলায় আন্তর্জাতিকভাবে ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের।
আর হকি বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন। পাপনের ভাষায়, ‘কতগুলো স্পোর্টস আছে, আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে ভালো করা সম্ভব।
অনেকে ভালো করছেও, যেমন আর্চারি, শুটিং। হকি একটা, আমাদের বিশ্বকাপ খেলা উচিত। হকিটা বিশ্বকাপে বাছাইপর্বের পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব।
ফুটবল তো এখন ভালো খেলছে—বিশেষ করে মেয়েরা ভালো খেলছে, ছেলেরাও ভালো খেলছে।’
নারী ফুটবল দল ২০২২ সালে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল সাফ শিরোপা। কিন্তু আর্থিক সংকটের অজুহাতে গত বছর অলিম্পিক বাছাই টুর্নামেন্টেও তাদের পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
স্বপ্রতিষ্ঠিত না হতে পারায়, সব ফেডারেশনেরই আর্থিক সমস্যা বারবারই সামনে আসে। পাপন অবশ্য এটাকেই মূল সমস্যা হিসেবে ধরতে নারাজ, ‘আমাদের অনেক অপশন আছে, অনেক প্রতিভা আছে।
এখন সমস্যা কী, সেটা আগে জানতে হবে। সব সময় শুনি, তাতে মনে হয় সমস্যা আর্থিক। এটাই একমাত্র কারণ হতে পারে না। আমি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশে স্পনসরের অভাব নেই।
খেলাধুলায় স্পনসর করার মতো লোক আছে। তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
একসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতি হলে ক্রিকেটপ্রীতি নিয়ে যেকোনো সময় উঠতে পারে প্রশ্ন।
তাই ক্রিকেট বোর্ড থেকে আলাদা হওয়া দরকারও বললেন তিনি, ‘যদি এই ক্রিকেট বোর্ড, মন্ত্রণালয়ে নাও থাকি, তাও ক্রিকেট সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে।
কিন্তু ভালো হয় যদি আলাদা হওয়া যায়। তাহলে আর মানুষের মধ্যে ওই সন্দেহটা হবে না—ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি সবগুলোকে গুরুত্ব দিতে চাই।’
সম্ভব হলে এ বছরেই বিসিবির পদ ছাড়তে চান ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক পাপন। তাহলে নতুন সভাপতি কে হবেন?
মাশরাফির বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগ্রহের কথা আসে। পাপন মনে করিয়ে দিলেন বোর্ড সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়াটা, ‘অবশ্যই এখন যারা বোর্ডের পরিচালক আছে, তাদের মধ্যে থেকে একজন হবে (সভাপতি)।
বাইরে থেকে কারও আসার সুযোগ নেই। (মাশরাফি) এটা বলা মুশকিল। এটা একটা প্রক্রিয়া। প্রথমে তাকে কাউন্সিলরশিপ নিতে হবে। এরপর নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।
যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারাই ঠিক করবে কে সভাপতি হবে।’ মাশরাফি ও সাকিব এ পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর হননি।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply