টাঙ্গাইলের বাসাইলে গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন গ্রামে রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ চোর গৃহস্তের বাড়িতে হানা দিয়ে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সর্বস্ব। এ কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক খামারি ও গৃহস্তরা। চোর ঠেকাতে রাতের আঁধারে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন তারা।
জানা যায়, বাসাইল উপজেলার নাইকানীবাড়ি, মিরিকপুর, হান্দুলিপাড়া, রাশড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের এখন রাত কাটছে নির্ঘুমে। বিভিন্ন বাড়ি থেকে রাতের বেলা চুরি হয়ে যাচ্ছে পালের গরু। কারও দু’টি আবার কারও তিন-চারটি গরু চুরি হয়ে গেছে। অনেকের শেষ সম্বল দুধেলা গরুও চুরি হয়ে গেছে। সব হারিয়ে পথে বসেছেন এসব খামারিরা। গত দুই মাসে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৮ টি গরু চুরি হয়েছে।
খামারিরা অভিযোগ করে জানান, এ ব্যাপারে পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না তারা। এখনও পর্যন্ত চুরি হয়ে যাওয়া কোন গরু উদ্ধার হয়নি। গরু চুরি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ প্রদক্ষেপ কামনা করেন ক্ষুদ্র খামারি ও কৃষকরা।
গোয়ালঘরের তালা ভেঙে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরচক্র। অনেক দিনের কষ্টে লালন-পালন করা গরুগুলো চুরি হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন নাইকানবাড়ী গ্রামের খামারী বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, গত এক মাস আগে আমার গোয়াল থেকে তিনটি গরুর চুরি হয়েছে। তিনটি গরুর দাম সাড়ে তিন লাখ টাকার উপরে ছিল। সারা বছর গরু লালন-পালন করে কোরবানির আগে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা নিয়ে সারা বছরের সংসারের খরচ চলে। চোর আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমি থানায় জিডি করেছি। এখন পর্যন্ত আমার গরু উদ্ধার হয়নি।
নাইকানবাড়ী গ্রামের খামারী জুয়েল মিয়া বলেন, আমার দুটি গরু চুরি হয়েছে। আমার শেষ সম্বল ছিলো ওই দুটি গরু। আমার মত এলাকার অনেকের গরু চুরি হয়েছে। কোনো ভাবেই চোর ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। তারপরও প্রায় গ্রামে চোর আসছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি পুলিশি টহল জোড় দেয়ার জন্য।
শুকুরি বেগম বলেন, আমার স্বামী চারটা গরু লালন-পালন করতো। সে গরুগুলো রেখে মারা গেছে। আমি ওই গরু লালন-পালন করতাম। সন্ধ্যায় গোয়ালে গরু গুলো বেঁধে রেখে গোয়ালঘর তালা দিয়ে রেখেছি। সকালে উঠে দেখি গোয়ালের তালা কাটা গরু নেই। আমার শেষ সম্বল ছিল ওই চারটি গরু। এখন আমি কি করবো কিভাবে চলবো, কিছুই জানি না। শুধু আমার না এরকম আরো অনেক মানুষের গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। পুলিশ যেন টহলের ব্যবস্থা জোরদার করে তাহলে চুরি হবে না। আমার মতো কারও আর পথে বসতে হবে না।
বাসাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহেল বলেন, বিষয়টি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল আমীন বলেন, এদের ঘটনা জানি ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেজন্য আমাদের রাত্রিকালীন পুলিশি টহল ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে চেক পোস্টের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply