মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
গত অক্টোবরে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) করানো হয়েছিল। সে সময় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল যে সাধারণ রোগী বা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে এমআরআই করানো হয় না, তাহলে কি ট্রাম্পের বড় কোনো রোগ হয়েছে কি না। সে সময় এ নিয়ে ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউস কোনো তথ্য প্রকাশ না করলেও গত রোববার ট্রাম্প নিজেই বলেন, এমআরআই-এর তথ্য প্রকাশ করতে চান। রেজাল্ট ভালো এসেছে বলেও জানান।
এরপর গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক ক্যাপ্টেন শন বার্বাবেলা ওই এমআরআই-এর ফলাফল প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং চমৎকার।
বার্বাবেলা একটি স্মারকলিপিতে বলেন, ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের হৃদরোগ ও উদরসংক্রান্ত উন্নত ইমেজিং পরীক্ষার ফলাফল ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’ এসেছে। গত অক্টোবরে শারীরিক পরীক্ষার সময় এই এমআরআই করিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বয়স ও স্বাস্থ্য নিয়ে ডেমোক্রেটদের দিক থেকে ক্রমাগত উদ্বেগ ও প্রশ্ন আসতে থাকায় এই এমআরআই-এর ফল প্রকাশ করা হয়।
স্মারকলিপিতে বার্বাবেলা লেখেন, প্রেসিডেন্টের ধমনীতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার মতো কোনো সংকীর্ণতা বা ট্রাম্পের হৃৎপিণ্ড বা প্রধান রক্তনালীগুলোর কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম চমৎকারভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এই স্ক্যানকে ট্রাম্পের বয়সের কারও ‘শারীরিক পরীক্ষার’ জন্য মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক।
গতকাল রোববার ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘এমআরআই ফলাফল প্রকাশ করার বিষয়টি আমার কাছে ঠিক লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি চান, তবে আমি তা প্রকাশ করব। এমআরআইয়ের রেজাল্ট ভালো এসেছে।’
এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন, ‘শরীরের কোন অংশের এমআরআই করিয়েছিলেন?’ ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘আমার কোনো ধারণা নেই। এটি কেবল একটি এমআরআই ছিল। তবে এটি মস্তিষ্ক ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মাথায় সমস্যা নেই। আমি সুস্থ আছি।’
গত অক্টোবরে ‘বার্ষিক নিয়মিত পরীক্ষার’ অংশ হিসেবে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে এমআরআই করিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন তিনি বলেছিলেন, এমআরআই ঠিকঠাকমতো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বার্বাবেলা বলেন, এমআরআইয়ের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরোধমূলক—সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করা, সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী জীবনীশক্তি ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখা।
গতকাল সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বার্বাবেলার স্মারকলিপি পাঠ করেন। লেভিট বলেন, ‘স্বচ্ছতার প্রচেষ্টায় এটি যথেষ্ট বিশদ তথ্য। প্রেসিডেন্ট গত রাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং আমরা আজ তা সরবরাহ করেছি।’
তবে এমআরআই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার জন্য ‘সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড নয়’ বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোর জেরিয়াট্রিক্স বিশেষজ্ঞ ড. কার্লা পেরিসিনোট্টো। তিনি বলেন, এটির বয়সভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ডের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে পড়ে না।
একইভাবে, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের সাধারণ অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা প্রধান ড. জেফ্রি এ. লিন্ডার বলেন, স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই যে এমআরআই করা হয়েছে নাকি সিটি স্ক্যান, ফলে ঠিক কি পরীক্ষা করা হয়েছে তা জানা কঠিন।
লিন্ডার বলেন, এমআরআই হোক বা সিটি স্ক্যান, সাধারণ রোগীদের বা কোনো উপসর্গ নেই এমন রোগীদের এসব পরীক্ষায় উৎসাহিত করা হয় না, কারণ সুবিধার তুলনায় সম্ভাব্য ঝুঁকি বেশি।
ট্রাম্পের প্রায়ই কিছু সমস্যা দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফুলে যাওয়া গোড়ালি এবং ডান হাতে কালশিটে দাগ। এমনকি বৈঠকের সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও দেখা গেছে।
গত জুলাইতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, তাঁর ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি নির্ণয় করা হয়েছে, যা একটি শিরার রোগ এবং এর ফলে পায়ের ফোলা দেখা দিতে পারে।
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply