দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নিম্নমুখী ধারায় ফিরেছে পেঁয়াজের দাম। ভারত থেকে সরবরাহ বাড়ায় ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে মসলাপণ্যটির দাম প্রায় ৫০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। গতকাল প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম নেমেছে ৫০-৬০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এখন যে পরিমাণ ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ঢুকছে, তাতে সপ্তাহের শেষে পণ্যটির দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ বাজারের তথ্যমতে, সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ শনিবার দেশী জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০-৭২ টাকায়, গত সপ্তাহের একই সময় ছিল ৮০ টাকা। গতকাল এসব পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৪৮-৫৫ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তা ৮০-৯০ টাকায় নেমে আসে। গতকাল এসব পেঁয়াজের দাম কমে প্রতি কেজিতে ৫০-৬০ টাকায় ঠেকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, চোরাই পথে দেশের বাজারে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকছে। মূলত এ কারণেই দাম কমছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশীয় পেঁয়াজের মান ভালো হলেও ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ মৌসুমে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। দেশের বাজারে দেখা দেয় ভারতীয় পেঁয়াজের সংকট। তখন মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের বেচাকেনা ও দাম ব্যাপক বেড়ে যায়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম এখন নিম্নমুখী। ভারতীয় পেঁয়াজ যে হারে পাইকারি বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে তাতে চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি দাম আরো ২০-৩০ টাকা কমার সম্ভাবনা আছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমে আসছে কিনা, সেটার জন্য বাজার মনিটরিং করা দরকার।’
জানা গেছে, গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জমুখী দেড়-দুইশ ট্রাক লালদীঘি এলাকায় আটকে ছিল। এসব ট্রাক খাতুনগঞ্জে ঢুকতে সময় লেগেছে দু-তিনদিনের বেশি। এসব ট্রাক একসঙ্গে বাজারে ঢুকে পেঁয়াজ খালাস করলে সরবরাহ ব্যাপক বেড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী সরবরাহের কারণে তখন থেকেই দাম কমতে শুরু করে। আরো কিছু ট্রাক বাজারে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। এরপর দাম আরো কমবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন নিম্নমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ২০-৩০ টাকা। আগামীতে দাম আরো কমে আসবে। বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু দেশের মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ খেতে পছন্দ করে। ফলে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়ে।’
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে দেশী পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে আবাদে আগ্রহ বেড়েছে। পাবনা, রাজশাহী, মাগুরাসহ যেসব জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়, সেখানে কৃষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রসঙ্গত, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৮-৩০ লাখ টন। গত অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন উৎপাদন-পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদন মৌসুমে সংকট না থাকলেও ‘অফ সিজনে’ এ পণ্যের সংকট তৈরি হয়। প্রতি বছরই পেঁয়াজের বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়।
সর্বশেষ রবি মৌসুমে দেশে রেকর্ড ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তবে পচনশীল হওয়া এবং সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট ও শুকিয়ে ওজন কমে যায়। এক্ষেত্রে রাজশাহী বা ফরিদপুরে দুই হাজার টন সক্ষমতার একটি হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যার জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ১০ লাখ ৮০ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন। এছাড়া প্রতি বছর ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply