| |
ভিডিও
ads for promotions
/
বালুখেকোদের ছোবলে ভয়াবহ নদী ধস, ক্ষতিগ্রস্থ ৮০ পরিবারের বাড়ি-ঘর

বালুখেকোদের ছোবলে ভয়াবহ নদী ধস, ক্ষতিগ্রস্থ ৮০ পরিবারের বাড়ি-ঘর

নিউজ ডেস্ক: আয়নুল হক, রিপোর্টার

প্রকাশিত: 08 December, 2024

  • 78
যশোর শহরের ভৈরব পাড়ের দু’কিলোমিটারের মধ্যে ভয়াবহ নদী ধসে অন্তত ৮০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। নদ থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকাণ্ডের ফলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ। জমি-বাড়ি ধসে এই পরিবারগুলোর অন্তত আট কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে এই নদী ভাঙ্গনের ঘটনা শুরু হয়। কিন্তু নদীর তীর রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এলাকাবাসীর অভিযোগে, ভৈরব খননের প্রকল্প চলাকালে প্রভাবশালী একটি মহল একাধিক ড্রেজিং মেশিন দিয়ে কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলন করে তাদের এমন বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বালু উত্তোলনের কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিনা তাদের জানা নেই। নদী গর্ভে ‘গর্ত’ হবার কারণে মাটি সরে যাওয়ায় এ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শহরের কাজীপাড়া আব্দুল আজিজ সড়কের তেতুলতলা কালভার্টের নিকটবর্তী ভৈরব নদে ড্রেজিং মেশিন স্থাপন করে বালু উত্তোলন শুরু করে। দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করে এক কিলোমিটারেরও বেশি দূরে শহরের পুলিশ লাইনের সরকারি পুকুর ভরাট শুরু করে। তখন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেও কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি। বরং পুলিশ লাইনের পুকুর ভরাট শেষে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে ব্যাপকমাত্রায় বালু উত্তোলন শুরু হলে ভৈরবের বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া, রায়পাড়া ও বাবলাতলা এলাকার ভৈরবপাড় জুড়ে ভূমিধস ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্রোতবিহীন নদের দু’পশে ছোটবড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, দেবে যাচ্ছে নদের পাড়। ভৈরব পাড়ের এই দু’কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৮০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে।

ভৈরব নদের বাবলাতলা ব্রিজের পাশে ধার-দেনা করে ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ি করেছিলেন প্রাইভেটকার চালক কেরামত আলী। গত অক্টোবর মাসে তার বাড়িটি ধসে পড়েছে। সোয়া ৮ শতক জমির সিংহভাগই নদীর পেটে চলে গেছে। কেরামত আলী জানান, বাড়ি নির্মাণের সব লোন বাকি, এখনও শোধ হয়নি। ইটভাটায় বাকি, রড-সিমেন্টের দোকানে বাকি আর এনজিও’র লোন মিলে ৫ লাখ টাকা এখনও দেনা। এর মধ্যে বাড়ি ভেঙে নদীতে চলে গেছে যেটুকু টিকে আছে তার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি।

ভৈরব পাড়ের বাবলাতলা এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, নদী খননের সময় ঠিকাদারের মাটি কাটার কথা। কিন্তু তারা তারা মেশিন লাগিয়ে বছরের পর বছর বালি তুলেছে। এই বালি তোলায় গত বর্ষার পর থেকে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। এর সঙ্গে ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিচ্ছে, ধসে পড়ছে। প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করে সাতমাস আগে তিনি বাড়ি করেছিলেন। সেই বাড়ি ভেঙ্গে গেছে।

পুরাতন কসবা রায়পাড়ার গৃহবধূ বেবী খাতুন জানান, তাদের বাড়ির দেওয়ালে প্রথমে ফাটল দেখা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনটি বেডরুম, ডাইনিং, ড্রইং ও বাথরুম পুরোটাই ধসে ভেঙে পড়ে। এছাড়া পুরাতন বাসার সঙ্গে নতুন ঘর তুলছিলেন, সেগুলোও ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে।

উপশহরের ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম জানান, বাড়িঘর ধসে যাওয়ায় তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে নদের তীর রক্ষা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। তারা পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

ভৈরবের বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে সোচ্চার থাকা সংগঠন ‘জনউদ্যোগ, যশোরের’ আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ জানান, আমরা আগেই বলেছিলাম বালি অধিক গভীর করে উত্তোলন করা হলে আশেপাশের অনেক দূর এলাকা ভূমিকম্পজনিত ব্যাপক ভূমিধসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রায় শত বছর লেগে যাবে। অনেক বছর ধরে এ গর্ত পরিপূর্ণভাবে বন্ধ হলেও তার উপর বহুতল ভবন নির্মাণ কষ্টসাধ্য হবে এবং টেকসই হবে না। এমন আরও অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ৪ বছর আগে আমাদের সতর্কবাণীকে আমলে নেয়া হয়নি বলেই আজকের এই বিপর্যয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই অঞ্চলের অন্তত ৮০টি পরিবার ঠিকাদার ও বালুখেকোদের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে অপরিদর্শী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জিএম রাইসুল ইসলাম জানান, ভৈরবপাড়ের ধসে পড়া এলাকায় বাঁশের খুঁটি পুঁতে জিও ব্যাগ দিয়ে পাড় রক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাড় রক্ষা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, ভৈরব নদ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে জনউদ্যোগ যশোর। বাবলাতলা ভৈরব নদের পাড়ে জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদের সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভৈরব নদ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনউদ্যোগ সদস্য বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক সুরাইয়া শরীফ, সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা মাসুমা বেগম, আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার, সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল প্রমুখ। 

সংবাদ সম্মেলন থেকে জনউদ্যোগ যশোর ভৈরব নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি এবং ভৈরব নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। 



Share On:

0 Comments

No Comment Yet

Leave A Reply

Nagorik Alo is committed to publish an authentic, Informative, Investigate and fearless journalism with country’s people. A highly qualified and well knowledged young team of journalists always fetch real news of the incidents or contemporary events. Providing correct news to the country's people is one kinds of community service, Keeping this in mind, it always publish real news of events. Likewise, Nagorik Alo also promised to serve the Bangladeshi people who reside in out of the country.

সম্পাদক : মোঃ ইলিয়াস হোসেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আরিফুর রহমান info@nagorikalo.com যোগাযোগ : 30/A, সাত্তার সেন্টার ( হোটেল ভিক্টরি) লেভেল 9, নয়া পল্টন, ঢাকা--১০০০ +8801753634332

© ২০২৩ nagorikalo.com