| |
ভিডিও
ads for promotions
/
বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে ভিসা অনিশ্চয়তা

বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে ভিসা অনিশ্চয়তা

নিউজ ডেস্ক: নাগরিক আলো প্রতিবেদক

প্রকাশিত: 15 September, 2025

  • 41
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে

মেধাবী তরুণ-তরুণীদের কাছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি লক্ষ্য নয়; বরং জীবন পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা। যেখানে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অসংখ্য গবেষণার সুযোগ মেলে, সেটিই হয়ে ওঠে অনেকের জীবনের মোড় ঘোরানোর আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই স্বপ্নপথে এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিসা–সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা।নাম নাই–বা বললাম। গত বছর অনার্স শেষ করা বাংলাদেশের এক তরুণী এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি-সংক্রান্ত অফার লেটার পেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা নেওয়ার জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। প্রথম দিকে কোনো সময়সূচি না পেয়ে হাল ছাড়তে হয়। পরে মে মাসে আবার চেষ্টা করলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট মেলে ঠিকই, তবে সেটা ডিসেম্বর মাসে, অর্থাৎ সাত মাস পর। স্বাভাবিকের তুলনায় এই দীর্ঘ অপেক্ষা তাঁর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে ভর্তি স্থগিত করে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হয়।



বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আজ দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তাঁদের চোখে যে স্বপ্ন দেখা যায়, তা কেবল ব্যক্তিগত নয়, একটি দেশের স্বপ্নও। সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলে ক্ষতিটা সবার। তাই এখনই সময় সরকার, দূতাবাস, বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবার—সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর।

আরেকজন শিক্ষার্থীর গল্প আরও বেদনাদায়ক। দেড় বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে মাস্টার্স করছিলেন, পড়াশোনাও ছিল শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ এক সকালে একটি ই–মেইল পান। তাতে জানানো হয়, তাঁর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে দেশ ছাড়তে হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি দখল ও গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি যে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন, সেটিই তাঁর ভিসা বাতিলের কারণ। বর্তমানে ছেলেটি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। চেষ্টা করছেন অন্য কোথাও পিএইচডি করার সুযোগ খুঁজে নিতে। কিন্তু ভিসা বাতিলের রেকর্ড থাকায় তাঁর জন্য নতুন কোনো সুযোগ পাওয়া এখন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর জন্য পরিবার যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবনভর পরিশ্রমের ফল। একমুহূর্তের ভিসা জটিলতায় সেই বিনিয়োগ বৃথা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ক্ষতিটা কেবল টাকার নয়, সবচেয়ে বড় ক্ষতি ঘটে মেধার। যখন একটি প্রতিশ্রুতিশীল মেধা মাঝপথেই আটকে যায়, তা শুধু শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, দেশের জন্যও এটি ক্ষতির বিষয়।


সত্যি কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর নানা জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, হঠাৎ বাতিল হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত কাগজপত্র যাচাই—সব মিলিয়ে তাঁরা অন্যায্য ভোগান্তির শিকার। এতে প্রশ্ন ওঠে, আমরা কি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও মেধাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য?


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষারত এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলছিলেন, এ ধরনের ভিসা আবেদনে যে খরচ হয়, তা ছাত্রদের জন্য অনেক। আবার ভিসা না পেলে সেই ফান্ড আরেকজনকে দিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক। একজন শিক্ষার্থীর জন্য সেটাও বড় ধাক্কা। কেননা, এই ফান্ড পেতে অনেক পরীক্ষা যেমন ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা, অধ্যাপককে দফায় দফায় মেইল, ভাইভা পরীক্ষা দেওয়াসহ নানা প্রক্রিয়ার অংশ নিতে হয়। শেষ ধাপ হলো ভিসা। সেটা না পেলে মন ভেঙে যায়।


শিক্ষার্থীরা আসলে আমাদের অঘোষিত দূত। তাঁরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শুধু নিজেদের জীবন বদলান না, বাংলাদেশের নামও উজ্জ্বল করেন। তাঁদের প্রতি অবহেলা মানে দেশের মর্যাদা ছোট করে দেখা।প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, সেখানে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের ভিসাপ্রক্রিয়াকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরাপদ করতে হবে।


দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের আগেভাগে প্রস্তুত করতে হবে, সঠিক কাগজপত্র ও নিয়মকানুন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।


তৃতীয়ত, যাঁরা ভিসা জটিলতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন, তাঁদের জন্য বিকল্প সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে, যেমন অনলাইন কোর্স চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা তৈরি করা।


বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আজ দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তাঁদের চোখে যে স্বপ্ন দেখা যায়, তা কেবল ব্যক্তিগত নয়, একটি দেশের স্বপ্নও। সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলে ক্ষতিটা সবার। তাই এখনই সময় সরকার, দূতাবাস, বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবার—সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর।


Share On:

0 Comments

No Comment Yet

Leave A Reply

Nagorik Alo is committed to publish an authentic, Informative, Investigate and fearless journalism with country’s people. A highly qualified and well knowledged young team of journalists always fetch real news of the incidents or contemporary events. Providing correct news to the country's people is one kinds of community service, Keeping this in mind, it always publish real news of events. Likewise, Nagorik Alo also promised to serve the Bangladeshi people who reside in out of the country.

সম্পাদক : মোঃ ইলিয়াস হোসেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আরিফুর রহমান info@nagorikalo.com যোগাযোগ : 30/A, সাত্তার সেন্টার ( হোটেল ভিক্টরি) লেভেল 9, নয়া পল্টন, ঢাকা--১০০০ +8801753634332

© ২০২৩ nagorikalo.com