নির্বাচনী বৈতরণি পার করেছে আওয়ামী লীগ। এবার সরকার গঠনের পালা।
সবার চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া পঞ্চম মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরোনোদের মধ্যে কারা বাদ পড়ছেন, কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন–এসব নিয়েই চলছে আলোচনা। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় এমন ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পেতে পারেন, যাঁরা সামনের দিনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন।
ফলে তাঁদের দপ্তরে দেখা যাবে নতুন মুখ। এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কারও কারও প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত। তাঁদের বিষয়েও নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি।
সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ ছিটকে পড়তে পারেন মন্ত্রিসভা থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশের পর সংসদ সচিবালয়ে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ।
দলের প্রধান শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হতে পারে। তবে শপথের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা নেই।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. মো. হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নসরুল হামিদ, মো. শাহরিয়ার আলম, জুনাইদ আহমেদ পলক।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোয় কারা থাকবেন, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অর্থমন্ত্রী হতে পারেন।
এ পদে তাঁর পাশাপাশি জামালপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রী না হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী হতে পারেন, এমন আলোচনাও আছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেতে পারেন। আরেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনিও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন আছে।
এ মেয়াদে সাবেক আমলাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। টেকনোক্র্যাট কোটায় দেখা যেতে পারে দু-একজন অর্থনীতিবিদকেও, যাঁরা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় কাজ করবেন।
পাশাপাশি সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিকও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা আছে, ড. সাদিককে শিক্ষা এবং সাজ্জাদুল হাসানকে বেসামরিক বিমান পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি আমার বিষয় নয়।
তারপরও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে, তা পূরণে যাঁদের যোগ্য মনে করবেন, তাঁদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা একমাত্র তাঁরই এখতিয়ার।’
এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় শক্ত রাজনৈতিক অবয়ব থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের মতে, এবারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খানের মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা আছে।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন সাতবারের নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজম।
তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন, নাকি চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তা নিয়েও আলোচনা আছে। ময়মনসিংহ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন মে. জে. (অব.) আবদুস সালামও।
অনেকে বলছেন, এবারের মন্ত্রিসভায় তরুণ মুখ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চাঁদপুর থেকে নির্বাচিত ড. সেলিম মাহমুদ, ঢাকার মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাশরাফি বিন মর্তুজা কিংবা নাজমুল হাসান পাপনকে মন্ত্রিসভায় দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিকদের না রাখার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এবার মন্ত্রিসভায় থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply