শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে সবকিছুর সমাধান করবে বলে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন রোববার (১১ আগস্ট) সকালে। পাশাপাশি সেই বিবৃতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ গ্রুপে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেছিল। তবে শিক্ষার্থীদের নানা সমালোচনার প্রেক্ষিতে বিকালে তিনিও পদত্যাগ পত্র জমা দেন। একইদিন পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনা পারভীন।
এছাড়া রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বডির আরো ৩ জন। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এবং মেডিকেল প্রশাসক অধ্যাপক ড. আসিফ ইকবাল।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের মুখে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি আবাসিক হলের প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সকল সদস্য পদত্যাগ করেন।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রায়ই আলোচিত-সমলোচিত হয়ে সবসময় খবরের শিরোনাম হন। তবে তিনি বেশি আলোচিত হয়েছিলেন ২০২২ সালে। ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা। এই আন্দোলন চলাকালে ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে ২৮ শিক্ষার্থী টানা ১৩৬ ঘণ্টা অনশন করেন। ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে ব্যারিকেড তুলে নেন। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়া একই সময় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না’ এরকম আপত্তিকর একটি মন্তব্য করে দেশব্যাপী সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এই আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অধ্যাপক ফরিদের কুশপত্তলিকা দাহ করেন। যদিও আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছ মোবাইল ফোনে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।
এছাড়াও ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শাবিপ্রবির মিনি অডিটরিয়ামে তথ্য অধিকার বিষয়ক এক সেমিনারে তালেবানি কালচার সমর্থন করে একটি বক্তব্য দেন। যা নিয়ে সারাদেশের অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এসব নানা মন্তব্য করে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়েছেন।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply