আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশে।
গত ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে এক প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল।
বর্তমানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া আছে। দেশের ৬২টি জেলায় সেনা মোতায়েন রয়েছে, তারা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করছে।
বৈঠকে আলোচনায় জানানো হয়, যদি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে তারা নির্বাচনে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।
পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা বৈঠকে জানান, মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এটি মোট কেন্দ্রের ৬৭ শতাংশেরও বেশি।
এর মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি 'অতি ঝুঁকিপূর্ণ' এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে শনাক্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এই চিহ্নিতকরণ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪২ হাজার ১৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার ৩০০টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।
বৈঠকে ভেটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটার ও নির্বাচন-সম্পর্কিত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওপর হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট প্রদানে বাধা এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানসহ বাসাবাড়িতে হামলা বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা থাকতে পারে।'
দেশব্যাপী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা সদস্য মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারা মোট আট দিন দায়িত্ব পালন করবেন—ভোটের তিন দিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পর চার দিন।
কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের ও নির্বাচনী উপকরণ রক্ষা করতে পারবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলবে। নির্বাচনী কাজে ড্রোনও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বৈঠকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়।
কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, চেকপোস্ট বসানো এবং আকস্মিক তল্লাশি চালাতে হবে।
প্রয়োজনে সীমান্ত ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ রাখার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।
আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, আইনশৃঙ্খলা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব সুপারিশ ও প্রস্তাব লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।
প্রতিটি বাহিনীকে ঝুঁকি মূল্যায়নের পর নিরাপত্তা ও মোতায়েন পরিকল্পনাও দিতে হবে। ঝুঁকির মাত্র বিবেচনায় এলাকাগুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ—এই তিন অঞ্চলে ভাগ করা হবে।
কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, 'যদি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।'
বৈঠকে নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাইবার হয়রানি রোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সতর্ক করা হয় যে, নির্বাচনের সময় মানব-ভয়েস ক্লোন করে চরিত্র হননের ঘটনাও ঘটতে পারে। এসব মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply