নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একটা আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় নিয়ে একটা ধারণা দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হয়নি দলগুলো। কারণ, নির্বাচন কবে হতে পারে, তা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি সরকার। বিএনপি এবং অন্যান্য দল বলছে, নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না দেওয়ায় সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্বও তৈরি হচ্ছে।
সক্রিয় দলগুলোর বড় অভিযোগ হচ্ছে, তাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়মিত, আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ নেই। যখন কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, তখন প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছেন। এ পর্যন্ত তিন দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সরকারের।
বিএনপি, এর মিত্র দল ও জোটগুলো এবং জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স চার মাস পার হওয়ার পর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় নিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আশা করতে পারেন যে নির্বাচন হচ্ছে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে।’
তবে বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, নির্বাচনের জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন নেই। তারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে। এদিকে জামায়াতে ইসলামী সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। দেরিতে হলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনের কথা বলায় এটিকে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং সময় নিয়ে একটা ধারণা দেওয়ার ব্যাপারেও দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে তারা। এখন দলগুলো তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোডম্যাপ তৈরির দাবি করছে।
দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সরকারকে পুরো সমর্থন দিয়ে আসছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ পর্যন্ত তিনবার বৈঠক করেছি। অনুরোধ করেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখা হয় এবং নিয়মিত আলোচনা করা হয়। কিন্তু তা হয়নি। দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই নির্বাচনের একটা সময়ের কথা বলা হয়েছে। এসব দূরত্ব সৃষ্টি করছে
সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের ভেতরে কাজ করছে কি না, এমন সন্দেহও তৈরি হয়েছে দলগুলোর মধ্যে। কারণ, স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা নতুন দল গঠন করছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো দল গঠন করা হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নও তুলেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নতুন দল গঠনের পেছনে সরকারের একাংশ আছে কি না এবং তাদের জায়গা করে দিতে নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা হতে পারে কি না—রাজনীতিতে এ আলোচনা আছে। আর এসব কারণে সরকারের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। ফলে দলগুলোর চিন্তা বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন।
Share On:
5 Comments
ocJQZHOh
January 09, 2025 at 6:31amocJQZHOh
January 09, 2025 at 6:31amMCViwuQAIct
January 13, 2025 at 3:57amMqylGfgNnyy
January 14, 2025 at 1:04pmMqylGfgNnyy
January 14, 2025 at 1:04pmLeave A Reply