বগুড়ায় কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন কালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, বঙ্গবন্ধুর দুটি মুর্যাল ও কয়েকটি ভবনের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। পরে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে শিক্ষার্থীরা সাতমাথা এলাকার বিভিন্ন মোড়ে কাগজের কার্টুন, বাঁশসহ বিভিন্ন কিছুতে অগ্নিসংযোগ ও দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে বিক্ষোভকারীরা এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে সাতমাথা থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ মিছিলটি জিলা স্কুল অতিক্রম করার সময় পুলিশকে দেখে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোতল ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিলা স্কুলের ভেতরে অবস্থান নেন।
মিছিলের একাংশ সার্কিট হাউস মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সার্কিট হাউসের অভ্যর্থনাকক্ষের কাচ ভাঙচুর করেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে জলেশ্বরীতলা, সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ী মোড়সহ গোটা শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছোরার সময় বিক্ষোভকারীরা দিগ্বিদিক ছুটে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় সমবেত হয়।
এ সময় সাতমাথার আশপাশের কয়েকটি ভবনের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। সাতমাথাস্থ মুক্তিযোদ্ধা জেলা সংসদের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল পুরোটাই ভেঙে ফেলে। এরপর পাশের বঙ্গবন্ধু মঞ্চের বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ভাংচুর করে। দেয়ালের সঙ্গে থাকা পাথরের মুর্যাল বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙার পর কাদা মাখিয়ে দেয়। পুলিশ বক্সে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাংবাদিকরা ছবি সংগ্রহ করতে গেলে তিনজনকে পিটিয়ে আহত করে। আহতরা হলেন দীপ্ত টিভির বগুড়ার প্রতিনিধি আবু সাঈদ (৪৭), যমুনা টিভির বগুড়ার ভিডিও জার্নালিস্ট আব্দুল মোমিন (২৮) ও ইনডিপেনডেন্ট টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট আলী হায়দার (২৬)। এছাড়া বিক্ষোভ মিছিলে আসা আরো ১৬ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতরা সবাই বিপদমুক্ত ও প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে সড়কের ওপরই আছরের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। এ সময় অন্যান্য ছাত্ররা তাদের ঘিরে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুঁড়েছে। বগুড়া শহরের থানার মোড়ে কিছু যুবক ভাংচুর করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার সেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করেনি মুল শহরের মধ্য দিয়ে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা চলে যায়।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply