স্বাস্থ সুরক্ষা ও লিঙ্গ বিষয়ক এক সেমিনার ২৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ মডেল স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়
স্বাস্থ সুরক্ষা ও লিঙ্গ বিষয়ক এক সেমিনার ২৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ মডেল স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন মোঃ মনিরুজ্জামান সরকার, অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মোঃ শামীম মিয়া। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সরকার তার বক্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও লিঙ্গ বৈষম্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমকালীন বিষয়, যা প্রতিটি সমাজে প্রভাব ফেলছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমরা শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এটি কেবল চিকিৎসা সেবা নয়, বরং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সচেতনতা এবং একটি সুস্থ জীবনযাপনের অংশ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং বিশ্রাম স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল উপাদান। আরো আছে রোগ প্রতিরোধে টিকা এবং অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। এছাড়া অাছে স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত সরকারি সুবিধা যেমন হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কর্মী।
স্বাস্থ্য সেবায় সমস্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা অনেক সময় গ্রামাঞ্চলে পৌঁছায় না। স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে অনেক সময় নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। লিঙ্গ বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য হলো পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে অযৌক্তিক বা অবিচারপূর্ণ পার্থক্য। আমাদের সমাজে এই বৈষম্য এখনও বিদ্যমান, বিশেষত নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য। এটি শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়, বরং শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক মর্যাদায়ও প্রভাব ফেলে।আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন পুরানো সামাজিক রীতি, সংস্কৃতি, এবং কুসংস্কারের কারণে নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বৈষম্য তৈরি হয়। অনেকে মনে করেন যে নারীরা বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্ষমতা বা সুযোগ কম হওয়া উচিত, যা ভুল ধারণা।
নারীরা অনেক সময় স্বাস্থ্য সেবায় কম সুবিধা পান, বিশেষ করে গর্ভবতী অবস্থায় বা মেনোপজের সময়। ছেলে মেয়ে বা মেয়ে ছেলের নিজস্ব পছন্দ কে প্রাধান্য দেওয়া।
তিনি বলেন, অনেক স্বাস্থ্য কর্মী তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করে, যার ফলে তারা সঠিক চিকিৎসা পেতে অসুবিধায় পড়েন।
এছাড়া অনেক সমাজে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, যার ফলে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা কম থাকে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা সমাজে মূল্যায়িত না হওয়ার কারণে শিক্ষায় অংশগ্রহণে বাধাগ্রস্ত হন।
তিনি বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ বিষয়ে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি, এবং শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কিত সমাজে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যেন মানুষ জানে এবং বুঝে যে পুরুষ বা নারী হিসেবে একে অপরের সমান অধিকার রয়েছে।
একইসঙ্গে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সেবা, এবং সামাজিক সুবিধায় নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আইনগত পদক্ষেপ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে লিঙ্গ বৈষম্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কেউ অবহেলিত না হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং লিঙ্গ বৈষম্য আমাদের সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের, যারা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে, তাদের এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
Share On:
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply