“তার এরূপ আচরণে অতিষ্ট হয়ে পূর্বের স্বামী বাদীকে তালাক প্রদান করে। পরবর্তীতে বাদী ঢাকায় এসে পিতা মাতার অনুমতি ব্যতিত বর্তমান স্বামীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করছে।”
তবে সিআইডির ওই প্রতিবেদন মানতে রাজি নন মামলার বাদী রাশিদা আক্তার।
তিনি বলেন, "সিআইডি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা মিথ্যা। মেডিকেল সার্টিফিকেট কি মিথ্যা? রিপোর্ট কি মিথ্যা? আমাকে কেন অ্যাসিড মারল? আমি মিথ্যা বলে থাকলে আল্লাহ বিচার করবে। সে যদি এগুলো করে না থাকে তাহলে মসজিদে গিয়ে বলুক এগুলো সে করেনি। আমার হাত-পা বেঁধে পেছন থেকে অ্যাসিড মারে।"
সিআইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, "মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি আমাকে হুমকি দিয়েছে। মামলায় আপস করতে বলে। আমি বলেছি, আদালতে মামলা করেছি। আদালদ যা করার করবে। সিআইডি আমাকে ব্যবহার করে আসামিদের কাছ থেকে টাকা খেল। ভুল তদন্ত রিপোর্ট দিল। আমরা গরীব মানুষ, তাই বলে কি ন্যায়বিচার পাব না?”
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী রাশিদা আক্তার অভিনেতা ডিপজলের ‘একজন ভক্ত’। গত কোরবানির ঈদের আগে ২ জুন তিনি গাবতলী হাটে গিয়েছিলেন গরু দেখতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন হাটের মধ্যে অফিসে অভিনেতা ডিপজল আছেন।
“তখন রাশিদা আক্তার সেই অফিসে গিয়ে ডিপজলকে সালাম দিয়ে বলেন যে তিনি অভিনেতার একজন ভক্ত। তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তখন ডিপজল তার পিএস ফয়সালকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘এই মহিলা ভিতরে কীভাবে ঢুকল? বের কর এখান থেকে’।
“তখন রাশিদা আক্তার ডিপজলকে বলেন, ‘ভাই আমি আপনার সাথে একটু কথা বলেই চলে যাব, আমাকে বের করে দিতে বলছেন কেন?’ রাশিদার এ কথায় ডিপজল রেগে বলেন, ‘এই তোরা এই মহিলাকে পিটিয়ে এখান থেকে বের কর’। তারপর ডিপজলের হুকুমে ও প্ররোচণায় ফয়সাল এবং তার সাথে থাকা অজ্ঞাতনামা আরো দুই ব্যক্তি রাশিদার ঘাড় ও হাত ধরে এবং পিঠে হাত দিয়ে জোর জবরদস্তি করে অফিসের ভিতর থেকে টেনে বের করেন। তখন তিনি জামা কাপড় পেচিয়ে মাটিতে পড়ে যান।”
অভিযোগে বলা হয়, “রাশিদা উঠে দাঁড়িয়ে ফয়সালকে বলেন, ‘আমি তো ডিপজল ভাইয়ের সাথে দেখা করে চলেই যেতাম, আপনারা আমার শরীরে হাত দিলেন কেন, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন কেন? তখন ফয়সাল তাকে বলেন, ‘এখান থেকে না গেলে তোর হাত পা ভেঙে পাশের তুরাগ নদীতে ফেলে দেব।’ রাশিদা এরপর প্রতিবাদ করে ফয়সালকে বলেন, ‘ভাঙেন হাত পা, দেখি আপনাদের কত সাহস’।
“রাশিদা এই কথা বলার পর ফয়সাল আশপাশে থাকা অজ্ঞাতনামাদের উদ্দেশে দড়ি আনার কথা বলেন। ফয়সালের কথায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি গরু বাঁধার রশি এনে তার হাতে দেন৷ এরপরে তিনি অন্য ব্যক্তিদের বলে, ‘এই তোরা এই মহিলা কে ধর।’
“এই কথা বলার সাথে সাথেই অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন ব্যক্তি তাকে চেপে ধরেন। এসময় ফয়সাল হাত বেধে ফেলে এবং অন্যান্য ৮/১০ অজ্ঞাতনামা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। তখন ভিকটিম কান্না করতে করতে করতে বলতে থাকেন, ‘আমাকে ছাড়, আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে বিচার দেব।’ তখন ফয়সাল বলেন, ‘ভিতরে গেলে ডিপজল ভাই তোকে খুন করে ফেলবে।’
“ফয়সাল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘ওকে এইভাবে মেরে মনের জিদ কমবে না।’ এই কথা বলেই তিনি অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তিকে বলেন, ‘ভিতরে একটা ছোট গ্যালন আছে, ওটা নিয়ে আয়।’ অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি অফিসের ভিতর থেকে গ্যালন নিয়ে এসে ফয়সালের হাতে দেন। এসময় ফয়সাল গ্যালনের মুখ খুলে বাদীর শরীরে ঢেলে দেন। রাশিদা যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করতে থাকেন। পরে বাসে করে তার বাসা যাত্রাবাড়ীতে আসেন।”
আর্জিতে বলা হয়, স্বজনরা দেখে জিজ্ঞাসা করেন এ অবস্থা কীভাবে হয়েছে। বাদী কাউকে কিছু না বলে ঘুমিয়ে যান। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বালাপোড়া অনুভব করেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা দেখেন। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন।
গত ১৩ নভেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ডিপজল ও ফয়সালের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছন রাশিদার স্বামী আব্দুল মজিদ।
আদালত এ অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
0 Comments
No Comment YetLeave A Reply