| |
ভিডিও
ads for promotions
/
ভারত বাদ, বাংলাদেশ-চীনকে নিয়ে জোট করতে চায় পাকিস্তান

ভারত বাদ, বাংলাদেশ-চীনকে নিয়ে জোট করতে চায় পাকিস্তান

নিউজ ডেস্ক: নাগরিক আলো প্রতিবেদক

প্রকাশিত: 06 December, 2025

  • 8

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ–পাকিস্তান ও চীনকে নিয়ে যে ত্রিদেশীয় ‘জোট গঠনের’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। চাইলে এই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোকেও এতে যুক্ত করা যেতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা লাভবান হয়ে অন্যের ক্ষতি করার বিপক্ষে। আমরা সবসময় সংঘাতের বদলে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি।’

ইশহাক দারের বক্তব্যে স্পষ্ট, নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান মূলত সার্কের বিকল্প কোনো কাঠামো প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে সার্ক বহু বছর ধরেই প্রায় অকার্যকর। এরই মধ্যে গত জুনে চীন–পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কূটনীতিকদের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান নিয়ে আলোচনা হয়। তখন জানানো হয়, এ আলোচনা ‘তৃতীয় কোনো দেশকে উদ্দেশ্য করে নয়’।

এ বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা তীব্র। ভারত ও পাকিস্তান কয়েক যুগের শত্রুতা বহন করছে, এমনকি গত মে মাসেই তাদের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় সম্পর্ক আরও তলানিতে যায়। গত মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড হলেও তাকে ফেরত দিতে ভারত এখনো অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে?

ইসলামাবাদ কনক্লেভে ইশহাক দার বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব জাতীয় উন্নয়ন প্রয়োজনীয়তা এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কারও অনমনীয়তার কাছে কখনো জিম্মি হওয়া উচিত না। আপনারা জানেন আমি কাদের (ভারত) কথা বলছি।’

তিনি আরও বলেন, গত ১১ বছর ধরে ভারত–পাকিস্তান সংলাপ ঝুলে আছে। ‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশের সম্পর্কও দোদুল্যমান। আমরা এমন এক দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখি যেখানে বিভাজনের জায়গায় সহযোগিতা আসবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হবে এবং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে।’

তবে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রাবেয়া আক্তার মনে করেন, ইশহাক দারের এই আশাবাদ বাস্তবের তুলনায় বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। যদিও এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ায় পাকিস্তান আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামোকে বহুমুখী করতে চায়।

সার্কের পটভূমি

১৯৮৫ সালে ঢাকায় সার্ক গঠিত হয়—বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ছিল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সপ্তম সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়ানোই লক্ষ্য হলেও ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে চার দশকেও জোটটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

২০১৬ সালে ইসলামাবাদে সার্কের ১৯তম সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে হামলার পর ভারত সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয় এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। এরপর থেকে আর কোনো সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি।

সার্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ২০০ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস—এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল। কিন্তু তাদের নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য মাত্র পাঁচ শতাংশ (প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার)। অন্যদিকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ২৫ শতাংশ, যদিও এসব দেশের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৭০ কোটি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যে বলা হয়, সার্ক অঞ্চলে বাণিজ্য বাধা দূর করতে পারলে মোট ৬৭ বিলিয়ন ডলারের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সম্ভব। ভারত–পাকিস্তানের সরাসরি বাণিজ্য ২০২৪ সালে ছিল মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, তবে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়েছে।

২০১৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের মতো আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তানের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। রেল সংযোগেও একই বাধা দেখা দেয়। এরপর করোনাকাল ছাড়া সার্ক আর বড় কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফারওয়া আমের মতে, ভারত–পাকিস্তান যদি সীমিত পর্যায়েও সহযোগিতায় যেতে পারত, তবে সার্ক পুনরুজ্জীবিত হতো। কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সেটি প্রায় অসম্ভব।

সার্ককে পাশ কাটিয়ে নতুন জোট গঠনের চেষ্টায় পাকিস্তান প্রথম নয়—এর আগে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল মিলে ‘বিবিআইএন’, আর বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে ‘বিমসটেক’ গঠিত হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রস্তাব সফল হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের শাবাব ইনাম খান বলেন, ‘পাকিস্তানের এ প্রস্তাব উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও খুব প্রয়োজনীয়। দক্ষিণ এশিয়া বারবার নিরাপত্তা-সর্বস্ব রাজনীতি ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাবে বাস্তবসম্মত আঞ্চলিক সহযোগিতা গঠনে ব্যর্থ হয়েছে।’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থির মতে, সার্কের ‘নীরব মৃত্যু’র পর দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন জোটের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক খারাপ হওয়া এবং চীন–পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতার কারণে ত্রিদেশীয় সহযোগিতার পথও তৈরি হয়েছে। 

তবে রাবেয়া আক্তার মনে করেন, প্রথমত দেখতে হবে—যে সময়ে আঞ্চলিক জোট স্থবির, সেখানে ছোট ও নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক জোটগুলোকে দেশগুলো কতটা গুরুত্ব দেবে। দ্বিতীয়ত, এসব উদ্যোগে অংশগ্রহণ ভারতের সঙ্গে কোনো নতুন রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করবে কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আগ্রহ দেখালেও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সীমিত।

অন্যদিকে দোন্থি মনে করেন, পাকিস্তানের এ প্রস্তাব সফল হলে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে এবং ভারত–চীনের প্রতিযোগিতাও বাড়বে।


Share On:

0 Comments

No Comment Yet

Leave A Reply

Nagorik Alo is committed to publish an authentic, Informative, Investigate and fearless journalism with country’s people. A highly qualified and well knowledged young team of journalists always fetch real news of the incidents or contemporary events. Providing correct news to the country's people is one kinds of community service, Keeping this in mind, it always publish real news of events. Likewise, Nagorik Alo also promised to serve the Bangladeshi people who reside in out of the country.

সম্পাদক : মোঃ ইলিয়াস হোসেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আরিফুর রহমান info@nagorikalo.com যোগাযোগ : 30/A, সাত্তার সেন্টার ( হোটেল ভিক্টরি) লেভেল 9, নয়া পল্টন, ঢাকা--১০০০ +8801753634332

© ২০২৩ nagorikalo.com